পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোডের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে পূর্ব রেলের অফিস। আগুনে পুড়ে এ পর্যন্ত চার দমকলকর্মীসহ মোট ৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, উদ্ধারকাজের সময় ওই ৯জনের সবারই লিফটে আটকে, দমবন্ধ হয়ে মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে রেলের এক কর্মকর্তা ও পুলিশের এক এএসআই-ও রয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্ট্যান্ড রোডের পূর্ব রেলের অফিসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কয়েক দফার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে টানা ১০ ঘণ্টা। পরে মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ:
কলকাতায় রেলের অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মৃত ও আহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের দ্রুত সুস্থতার কামনাও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। নিহতদের মধ্যে রেলের এক পদস্থ কর্মকর্তা, দুই রেলকর্মী, এক আরপিএফ কর্মী, ফায়ার সার্ভিসের চার কর্মী এবং কলকাতা পুলিশের এক এএসআই রয়েছেন।
কেন্দ্র থেকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা:
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কেন্দ্রের পক্ষে মৃত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় বিপর্যয় তহবিল থেকে মৃতদের পরিবারের সদস্যদের ২ লাখ করে টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ই তিনি মৃতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
রেলমন্ত্রীর শোক ও তদন্ত কমিটি:
অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল। ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করতে রেল মন্ত্রণলায়ের চারটি বিভাগের প্রধানদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা তিনি আরও জানিয়েছেন, জেনারেল ম্যানেজার-সহ রেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে ছিলেন। তারা রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের সঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করেছেন। যদিও ঘটনাস্থলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, আগুন নেভাতে রেলের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। রেলের তরফে কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। যে বাড়িতে আগুন লেগেছে, সেই বাড়ির ব্যাপও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
রেলের ভূমিকায় প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর:
নিউ কয়লাঘাটা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার অভিযোগ সেসময় রেলের পক্ষে কেউ আসেনি। বহুতলের ম্যাপ চাওয়া হয়েছিল। তাও পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে চান না। তবে যেহেতু রেলের জায়গা, তাই দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর থেকে তিনি খোঁজ করে জানতে পেরেছেন, কেউ আসেননি।
মৃত ও আহতদের পরিবারকে সাহায্যের কথা ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর:
মুখ্যমন্ত্রী যেসময় সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন, সেই সময় নিখোঁজ ছিলেন অন্তত দুজন। তিনি জানান, লিফটে মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। তাদের মধ্যে চারজন দমকলকর্মী। বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সরকার ঠিক করেছেন মৃতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হবে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, মৃত্যুর কোনও বিকল্প হয় না।
আগুন নেভাতে গিয়ে লিফটের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন:
লিফট ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন এদিকে আগুন লাগার ঘটনার সময় দমকলকর্মীদের লিফট ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সকলেরই জানা উচিত আগুন লাগলে লিফট ব্যবহার করা উচিত নয়। হয়ত তাড়াতাড়ি হবে, সেই ভেবেই তাঁরা লিফটে উঠেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বন্ধ টিকিট বুকিং:
এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে বন্ধ হয়ে যায় রেলের অনলাইন টিকিট বুকিং। উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব রেলের সমস্ত বুকিং বন্ধ হয়ে যায়। আগুন নেভাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতেই বন্ধ হয়ে যায় সার্ভার এবং লাইব্রেরি। সকালেও বেশ কিছু ট্রেনের সংরক্ষিত তালিকা প্রকাশ নিয়ে অসুবিধায় পড়েন রেলের কর্মীরা।