কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর হামলায় নিহত ২৬, সৌদী সফর সংক্ষিপ্ত করলেন মোদী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ১১:৫১ এএম

কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর হামলায় নিহত ২৬, সৌদী সফর সংক্ষিপ্ত করলেন মোদী

ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালের পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে আত্মঘাতী হামলার পর কাশ্মীরে কখনো এতবড় সন্ত্রাসী হামলা হয়নি। এভাবে পর্যটকদের আক্রমণ করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ২৫ জন পর্যটক ও একজন টাট্টু ঘোড়ার সহিস মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৬।

মৃতদের মধ্যে কলকাতা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট থেকে যাওয়া পর্যটকরা আছেন। নিহতদের মধ্যে দুইজন বিদেশিও আছেন।

কী হয়েছিল?

পহেলগামের কাছে বৈসরন উপত্যকা পর্যন্ত গাড়ি যায় না। পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্র এই উপত্যকায় হেঁটে বা ঘোড়ার পিঠে করে পৌঁছাতে হয়। বেশ কিছুটা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে এখানে পৌঁছাতে হয়। এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রবলভাবে আকর্ষণ করে পর্যটকদের।

মঙ্গলবার পর্যটকদের একটি দল সেখানে পৌঁছায়। তারা একটু ঘুরে খাওয়া-দাওয়া করছিলেন, তখন সন্ত্রাসবাদীরা সেখানে যায়। তাদের পরণে ছিল সামরিক পোশাক। পর্যটক মহিমা এবং অন্য কিছু প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বেলা ২টো ৪০ মিনিট নাগাদ জনা পাঁচেক জঙ্গি সেখানে এসে খুব ঠান্ডা মাথায় ধীরে-সুস্থে পর্যটকদের খুন করে পাহাড়ের ঢাল দিয়ে নেমে যায়। সেটা দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে হয়েছে, আগে থেকে নিখুঁত পরিকল্পনা করে তারা এই কাজ করেছে।

কর্ণাটক থেকে কাশ্মীর এসেছিলেন পল্লবী। তার ও তার ছেলের সামনে স্বামী মল্লিনাথকে খুন করে সন্ত্রাসবাদীরা। পল্লবী তাদের বলে, “আমাদেরও মেরে ফেলো।” সন্ত্রাসীরা জানায়, “তোমাদের বাঁচানো দরকার। যাও, মোদীকে গিয়ে বলো।”

নিহতদের মধ্যে আছেন কয়েকদিন আগে বিয়ে করা নৌবাহিনীর অফিসার বিনয় নারোয়াল।

একজন ঘোড়ার সহিস মারা গেছেন। তিনি পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়েছিলেন। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি মারা যান।

জঙ্গিরা পর্যটকদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করার পর ঠান্ডা মাথায় গুলি করে মারে। রেস্তোরাঁয় যারা খাবার খাচ্ছিলেন, তাদের পরিচয় জানার পর মারা হয়েছে। ঘটনার পর ভয়ংকর সব ছবি ও ভিডিও সামনে এসেছে। যেখানে মৃত স্বামীর পাশে কান্নায় ভেঙে পড়া নারীদের ছবি রয়েছে।

জঙ্গিরা তাণ্ডব চালিয়ে চলে যাওয়ার পর স্থানীয় সহিসরা উদ্ধারকাজ শুরু করে। হেলিকপ্টার এসে পর্যটকদের নিয়ে যায়। তবে রাতের মধ্যে সব দেহ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। সেগুলি বুধবার নিয়ে যাওয়া হবে।

দায় স্বীকার

কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর সচরাচর আক্রমণ করে না সন্ত্রাসবাদীরা। অতীতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও এরকমভাবে পর্যটকদের হত্যা করার ঘটনা বিরল।

পর্যটকদের উপর আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে দ্য রেসিট্যান্স ফোর্স (টিআরএফ)। এই সংগঠন ভারতে নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তইবার শাখা সংগঠন বলেই মনে করে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী।

টিআরএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “প্রায় ৮৫ হাজার মানুষকে কাশ্মীরে আবাসিক সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। কাশ্মীরের জনবিন্যাস বদলে যেতে পারে। বহিরাগত মানুষরা পর্যটক হয়ে সার্টিফিকেট নেয়। তারা জমির মালিক হতে চায়। তাদের নিশানা করে আক্রমণ চালানো হয়েছে।”

সফর কাটছাঁট করে প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার দুইদিনের সফরে সৌদি আরবে গেছিলেন। কিন্তু কাশ্মীরে সন্ত্রাসী আক্রমণের খবর পাওয়ার পর তিনি সফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরে আসেন। তিনি সৌদির যুবরাজ সালমানের সঙ্গে বৈঠকের পরই দিল্লি ফিরে আসেন।

বুধবার বেলা এগারোটার সময় তিনি ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি বা সিসিএস বৈঠকে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। সিসিএস হলো সুরক্ষা বিষয়ক সর্বোচ্চ মন্ত্রিসভা কমিটি। বুধবার সকালে দিল্লি পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরেই তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠক করেন। সৌদি থেকে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

মোদী বলেছেন, এই ঘটনার পিছনে যারা আছে, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।

ভারতের সামরিক বাহিনীর প্রধান বুধবার সকালে সাউথ ব্লকে গিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-কে ঘটনার বিষয়ে জানিয়েছেন।

অমিত শাহ কাশ্মীরে

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কাশ্মীর গেছেন। তিনি সেখানে মৃত পর্যটকদের শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন।

ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার কাশ্মীরে বনধের ডাক দিয়েছে কাশ্মীর চেম্বার্স অফ কমার্স, হোটেল ব্যবসায়ী সংগঠন, কাশ্মীরের নাগরিক সমাজ ও পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন। পহেলগাম-সহ কাশ্মীরের একাধিক এলাকায় মানুষ মোমবাতি মিছিল করেছেন।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে অমিত শাহ এবং ওমর আবদুল্লার সঙ্গে ফোনে কথা বলে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান

এই ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের খোঁজে অভিযান শুরু করেছে।

উরিতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে দুইজন সন্ত্রাসী মারা গেছে।

কেন আক্রান্ত পর্যটকরা?

সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার শান্তনু মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, “কাশ্মীর খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হচ্ছিল। প্রচুর পর্যটক যাচ্ছিলেন। শুধু অমরনাথ যাত্রার জন্য নয়, সব ধরনের পর্যটক যাচ্ছিলেন। পর্যটকরা কাশ্মীরিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করছিলেন।”

তিনি বলেছেন, “আমাদের প্রতিবেশী দেশ সবসময় এই ধরনের কাজ করতে চায়। তারা তাদের কাজের ধরণ বদল করেছে। তাদের মনে হয়েছে, পর্যকদের আসা বন্ধ করলে তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। পাক সেনাপ্রধান সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছে, কাশ্মীর হলো তাদের গলার কাছের শিরা। এই বিবৃতির কোনো প্রয়োজন ছিল না। এই বিবৃতিকে আলাদাভাবে নয়, এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। কাশ্মীরের পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে, সেখানে শান্তি ফিরেছে, তা তারা সহ্য করতে পারছে না।”

শান্তনু মুখোপাধ্যায় মনে করেন, “এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারতকে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন সুরক্ষা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

সূত্র: ডিডাব্লিউ বাংলা।

Link copied!