আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় অনেক পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক ও শাস্তিমূলক মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার খবর জানিয়েছে বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম। রাশিয়ার কাছে থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ না করায় দেশটির ওপর শুল্কের এমন চাপ দিলেন ট্রাম্প।
মার্কিন বাজারে ঢুকতে ভারতীয় পণ্যের ওপর নির্ধারিত এই শুল্ক হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাত যেমন- ওষুধ ও কম্পিউটার চিপ বাড়তি শুল্ক থেকে বর্তমানে অব্যাহতি পাচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে এগুলোর ওপর আলাদা শুল্ক আরোপ হতে পারে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে ভাটা এনেছে। বিপরীতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাধ্য করছে নয়াদিল্লিকে। ভারতের পণ্যের ওপর মোট শুল্কের মধ্যে ২৫ শতাংশ পারস্পরিক, আর বাকি ২৫ শতাংশ রাশিয়ান তেল কেনার শাস্তি হিসেবে আরোপ হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত। যুক্তরাষ্ট্র তাদের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার। এখন এই বাড়তি শুল্ক ভারতের রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধিতে বড় আঘাত হতে পারে।
যেসব খাতে প্রভাব পড়ছে
মার্কিন শুল্কের বড় ভুক্তভোগী হতে যাচ্ছে ভারতের পোশাক, টেক্সটাইল, অলংকার থেকে শুরু করে চিংড়ি, কার্পেট ও আসবাবপত্র। এর মধ্যে পোশাক, কাঁচা খাদ্যপণ্য ও আসবাব খাতের সঙ্গে বহু স্বল্প আয়ের মানুষ জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এসব পণ্য রপ্তানি কমে গেলে শ্রমিকরা চাকরি হারানোর মুখে পড়বেন।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ সালে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানি নেমে আসতে পারে ৪৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া মোট পণ্যের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ৫০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়বে। কিছু কিছু পণ্যে শুল্কহার ৬০ শতাংশেরও বেশি হতে পারে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বড় প্রভাব পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিতে। রাজ্যের চামড়াজাত, প্রকৌশল ও সামুদ্রিক খাত ক্ষতির মুখে পড়বে। রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, মার্কিন শুল্কের কারণে সৃষ্ট ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় অনেক পণ্যের চালান ও উৎপাদন বর্তমানে স্থগিত আছে।
ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস মঙ্গলবার জানায়, তামিলনাড়ুর তিরুপুর, উত্তর প্রদেশের নয়ডা ও গুজরাটের সুরাটের টেক্সটাইল ও পোশাক প্রস্তুতকারকরা এরইমধ্যে উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
সংস্থাটির সভাপতি এস সি রলহান বলেন, ভারতের এসব খাত এখন বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। শ্রমনির্ভর খাতগুলোও (চামড়া, চিংড়ি ও হস্তশিল্প) ঝুঁকির মুখে আছে। এ অবস্থায় দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি, ঋণ পরিশোধের স্থগিতাদেশ ও স্বল্পসুদে ঋণ সহায়তা প্রয়োজন।