মে ২৩, ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় গত ২ দিনে অনাহারে ২৯ শিশু ও বৃদ্ধ মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একই সময় এ উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ক্ষুধায় শিশু ও বৃদ্ধদের মৃত্যুর এ সতর্কবার্তা এমন সময় এল, যখন গাজায় অবরোধ তুলে নিতে ও আক্রমণ বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল তিন মাস পর সেখানে সীমিত আকারে ত্রাণসামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এ অনুমতি পাওয়ায় চলতি সপ্তাহে উপত্যকাটিতে অনাহারক্লিষ্ট অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্যসহায়তা পৌঁছানো শুরু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএর মুখপাত্র জেন্স লারকে গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, ত্রাণ নিয়ে অপেক্ষমাণ প্রায় ২০০ ট্রাকের মধ্যে ৯০টি গাজায় প্রবেশ করেছে। এগুলোতে ওষুধ, আটা ও পুষ্টিকর সামগ্রী আছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তাহীনতা, লুটের আশঙ্কা ও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে ত্রাণ বিতরণে বড় বাধার মুখে পড়ছে সংস্থাগুলো।
তবে গতকাল ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানায়, গাজার জনগণ এখনো সীমান্ত পেরিয়ে আসা ত্রাণ পাননি এবং এত কমসংখ্যক ট্রাক পাঠানো ‘মৃত্যুকেই যেন আমন্ত্রণ’ জানানো। কারণ, এতে ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
‘আমি প্রমাণ করতে পারি, কেউই (ত্রাণ) পাননি। কোনো বেসামরিক নাগরিক এখনো কিছুই পাননি। আসলে বলা যায়, অধিকাংশ ট্রাক এখনো গাজা-ইসরায়েল সীমান্তের কেরেম শালোমে অবস্থান করছে। সেগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে, কিন্তু গাজায় প্রবেশ করেনি’, সাংবাদিকদের বলেন ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের সভাপতি ইউনিস আল-খাতিব।
ইউনিস আল-খাতিব আরও বলেন, ‘(এমন অবস্থায়) যে হুড়োহুড়ি বা লুটপাট ঘটতে পারে, তা আড়াল করা খুব কঠিন।’
গাজায় অপুষ্টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে কয়েক মাস ধরেই ধ্বংসপ্রাপ্ত এ অঞ্চলের চিকিৎসক ও ত্রাণকর্মীরা সতর্ক করে আসছেন। লোকজনের স্থানচ্যুতি, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পরিচালিত বেকারিগুলো রান্নার গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বাজার ও দোকানে সীমিত খাদ্যপণ্যের অতিমূল্যের কারণে ত্রাণ বিতরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
‘গত কয়েক দিনে আমরা অন্তত ২৯টি শিশুকে হারিয়েছি’, পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাজেদ আবু রমাদান সাংবাদিকদের জানান। তাদের মৃত্যুকে তিনি অনাহার-সম্পর্কিত হিসেবে বর্ণনা করেন। পরে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, অনাহারে মারা যাওয়াদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ উভয়েই আছেন।
চলতি মাসের শুরুতে ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)’ অনুমান করেছে, গাজায় ৫ বছরের নিচের প্রায় ৭১ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগবে ও আগামী ১১ মাসের মধ্যে ১৪ হাজার ১০০টি ঘটনা হবে চরম মাত্রার।
ইসরায়েল গত মার্চে গাজায় সব ধরনের পণ্য সরবরাহে অবরোধ আরোপ করে। তারা দাবি করে, হামাস এই ত্রাণ সরবরাহ নিজেদের যোদ্ধাদের জন্য দখল করছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
চলতি মাসের শুরুতে বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণকারী একটি সংস্থা জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় পাঁচ লাখ মানুষ অনাহারের মুখোমুখি।
এদিকে ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত গাজা সিটির মেয়র থাকা আবু রমাদান বলেন, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৭ বা ৮টি আংশিকভাবে কাজ করছে এবং ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ৯০ শতাংশের বেশি চিকিৎসা সরঞ্জামের মজুত এখন শূন্য হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় প্রবেশ করা সহায়তার পরিমাণ সংকট মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের অনেক কম।
৫৩ বছর বয়সী গাজার বাস্তুচ্যুত একজন ফিলিস্তিনি উম তালাল আল-মাসরি এ পরিস্থিতিকে ‘অসহনীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
৩৮ বছর বয়সী হুসাম আবু আইদা বলেন, ‘আমার সন্তানদের জন্য আমি উদ্বিগ্ন।’ এএফপিকে তিনি বলেন, ‘তাদের জন্য আমি ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের চেয়ে বেশি ভয় পাই ক্ষুধা ও রোগকে।’