কারাগারে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির চেয়ারম্যান ‘ইমরান খানের সাথে জঙ্গির মতো ব্যবহার করা হচ্ছে‘ বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী ও তাঁর আইনবিষয়ক মুখপাত্র নঈম হায়দার পাঞ্জোথা।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার জেলখানা থেকে বেরিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নঈম হায়দার জানান, শুধুমাত্র তিনিই জেলে গিয়ে ইমরান খানের সাথে কথা বলতে পেরেছেন। ইমরান খান এসময় জানান, তার সাথে এমন ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে মনে হচ্ছে তিনি (ইমরান) একজন জঙ্গি।
ইমরানের আইনবিষয়ক মুখপাত্র আরও বলেন, “ইমরানকে খুব ছোট ও অন্ধকার সেলে রাখা হয়েছে।তাঁকে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করতে হচ্ছে। ওই সেলে শুধুমাত্র একটা সিলিং ফ্যান রয়েছে। তারপরও ইমরানের মনোবলে একটুও চিড় ধরেনি। তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি তৈরি।”
প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলায় গত শনিবার ইমরান খান গ্রেপ্তার হন। এর পর তাকে অ্যাটক কারাগারে রাখা হয়েছে। গ্রেফতারের পর গতকাল সোমবার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন তার আইনজীবী ও আইন বিষয়ক মুখপাত্র নঈম হায়দার পাঞ্জোথা।
গত বছরের এপ্রিলের শুরুর দিকে পাকিস্তানি সংসদ সদস্যদের অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়েন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক এই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
সংবিধানের ৬৩ (১) (পি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অক্টোবরে ইমরান খানকে দেশটির পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে পাওয়া সম্পদ তিনি বিক্রি করেছেন এবং সেই তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ আনে নির্বাচন কমিশন। এরপরই আসে এই সিদ্ধান্ত।ইমরানের বিরুদ্ধে এই দুর্নীতির অভিযোগটি তোশাখানা বিতর্ক নামে পরিচিতি লাভ করে।
পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ক্রিকেটার কাম রাজনীতিবিদ ইমরান খানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার উত্থান-পতনের। এক সময় বিশ্ব ক্রিকেটে রাজত্ব করেছেন তিনি। দেশকে এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। খেলার জগৎ ছেড়ে ব্রিটেনের অন্যতম ধনকুবের স্যার জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমিমা স্মিথকে বিয়ে করেন, পরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৯৬ সালের ২৫ এপ্রিল, রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই প্রতিষ্ঠা করেন ইমরান খান। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন দলটির।
এক সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তানের মতো একটি অস্থিতিশীল দেশের। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে সেনাপ্রধান ও আদালত তাঁর বিপক্ষে চলে গেলে বিরোধী দলের আনা অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। গদি হারালেও রাজনীতির মাঠ ছাড়েননি তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে এক সভায় গুলিতে আহতও হন তিনি। এতে সাধারণ জনগণ তাঁর পক্ষে ব্যাপকভাবে সাড়া দিতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর চেষ্টা শুরু করে।
এ ক্ষেত্রে ‘তোশাখানা বিতর্ক ইস্যুটি তাঁরা অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। এই বিতর্কের জেরে দলীয় প্রধান হিসেবে ইমরান খান থাকতে পারবেন না বলে ঘোষণা দেয় দেশটির নির্বাচন কমিশন। পিটিআই প্রধান এর বিরুদ্ধে আপিল করলে নির্বাচন কমিশনের ওই রায় স্থগিত করে লাহোর হাইকোর্ট। এখন জেলে যেতে হয়েছে ইমরান খানকে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খানের অংশগ্রহণেরও অযোগ্য ঘোষণা করেছেন আদালত। ইমরান খানের কারাদণ্ড ও জেলে যাওয়া ইস্যুতে আবারও পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এমতাবস্থায় দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণ করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।