ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত আজ সপ্তম দিনে গড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার পর গাজা উপত্যকা অবরুদ্ধ করে সেখানে টানা বোমাবর্ষণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। অপর দিকে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে। সেখানে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ।
জাতিসংঘ বলছে, গাজার ৫০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ও সুপেয় পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফ্রান্সে ফিলিস্তিনের সমর্থনে সব ধরনের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে দেশটির পুলিশ। ইহুদিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয় এমন বিক্ষোভ–সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে জার্মানির বার্লিন পুলিশও।
ইসরায়েল বলেছে, হামাস জিম্মি করা ব্যক্তিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় গ্যাস, পানি, খাবার ও বিদ্যুৎ দেওয়া হবে না। গত শনিবার হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে অন্তত দেড় শ ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে জিম্মি করেছেন।
দুটি ভূখণ্ডে গত কয়েক দশকের চলমান উত্তেজনা পুনরায় রূপ নিয়েছে যুদ্ধে। যা বিশ্বকে কার্যত দুটি শিবিরে ভাগ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে। কেউ সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে, আবার কেই ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলছে। আবার কারও বক্তব্যে ফুটে উঠেছে `নিরপেক্ষ অবস্থানের` কথা।
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তাদের দৃঢ় ও অটুট সমর্থনের কথা জানিয়েছে। তিনি জোরালোভাবে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র "ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াবে" এবং যা কিছু প্রয়োজন তা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনও শুক্রবার ইসরায়েল যাবেন বলে জানা গেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার ইসরায়েল সফরে গিয়ে দেশটির প্রতি অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইরান: ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে তেহরান। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি গত রোববার এ মন্তব্য করেন। সেই সাথে এই অঞ্চলকে বিপদগ্রস্ত করার জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সৌদি আরব: ‘উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অবিলম্বে বন্ধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও আত্মসংযম’ দেখানোর জন্য সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আহ্বান জানিয়েছে।
চীন: ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে ‘শান্ত’ থাকতে এবং শিগগির যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।
রাশিয়া: তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং সেই সঙ্গে সমন্বিত, দীর্ঘস্থায়ী ও বহুল প্রতীক্ষিত আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারত: ইসরায়েলের ‘কঠিন সময়ে’ দেশটির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলার খবরে ভারত গভীরভাবে হতবাক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যুক্তরাজ্য: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি যুক্তরাজ্যের ‘অবিচল সমর্থনের’ কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ইসরায়েলকে সাহায্যে যা কিছু করা সম্ভব, সবই যুক্তরাজ্য করবে বলেও জানান তিনি।
তুরস্ক: ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের প্রতি বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
হামাসের হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের প্রতি সংহতি জানাতে শুক্রবার ইসরায়েল সফরে যাবেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার ইসরায়েল সফরে গিয়ে দেশটির প্রতি অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যান্য
হামাসের হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দা করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি এবং জার্মানির নেতারা।
মূলত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে ফোনে কথোপকথনের পর এসব দেশের যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোনও যৌক্তিকতা নেই, কোনও বৈধতা নেই এবং অবশ্যই সর্বজনীনভাবে এই হামলার নিন্দা করা উচিত।’
ফিলিস্তিনিদের সাথে সংঘাত বাড়িয়ে তোলার জন্য এবং চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য এককভাবে ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছে কাতার এবং কুয়েত। সহিংসতার মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে মিশর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।