যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার কৌশল ইসরায়েলের

আল জাজিরা

ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৭:৪৮ পিএম

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার কৌশল ইসরায়েলের

ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত গাজায় সব হারিয়ে নিঃস্ব ফিলিস্তিনি নারীর আহাজারি। ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজায় বেসামরিক নাগরিক হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিজেদের সেনাদের হাতে জিম্মি নিহতের ঘটনায় ইসরায়েলের ওপর যুদ্ধবিরতির চাপ বাড়ছে। 

কয়েক দিন আগে গাজায় হামাসের হাতে থাকা তিন জিম্মিকে ‘ভুলে’ গুলি করে হত্যা করেন ইসরায়েলের সেনারা। যদিও জিম্মিদের হাতে ওই সময় ‘সাদা পতাকা’ ছিল বলে দেশটির তদন্তে উঠে আসে। এ ঘটনায় দেশে-বিদেশে চাপে পড়ে ইসরায়েল সরকার। মঙ্গলবারও ইসরায়েলি হামলায় গাজায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।

তবে যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময়ের আলোচনায় সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার কৌশল নিয়েছে ইসরায়েল।

এরপর নতুন করে বন্দী বিনিময় ও যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করতে ইসরায়েল সম্মত হয়। এরই অংশ হিসেবে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়ার মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তবে সমঝোতার শর্ত নিয়ে এখনো ইসরায়েল ও হামাসের মতৈক্য হয়নি।

গতকাল প্যারিসে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে আরেক দফায় দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।

দোহা ইনস্টিটিউট অব গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক তামের কারমোত বলেন, আলোচনার প্রেক্ষাপটে হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির ‘একটা সুযোগ’ তৈরি হয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, এতে অনেক সময় লাগবে।

তামের বলেন, গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে আলোচনায় ইসরায়েলিরা সময়ক্ষেপণে আগ্রহী। তারা এর মাধ্যমে বন্দীদের পরিবার ও যাঁরা বন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, তাঁদের বুঝ দিতে চান যে তারা কিছু একটা করছে। এই বিশ্লেষক আরও বলেন, হামাস চায় এখনই যুদ্ধ বন্ধ হোক। অবিলম্বে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। কেবল এরপরই তারা আলোচনায় বসতে রাজি।

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মরদেহ
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও গাজায় বড় ধরনের হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবির এলাকায় এক হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। একটি ভিডিওতে সেখানে সড়কে মরদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ বলেন, হতাহত ব্যক্তিরা মাটিতে পড়ে আছেন। অনেকে নিহত হয়েছেন। কারও কারও দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা ব্যাপক।

এ ছাড়া গত সোমবার রাতে দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৯ জন নিহত হয়েছেন। একটি আবাসিক ভবনে এ হামলা চালানো হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৬৭ দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন সাড়ে ৫২ হাজার ফিলিস্তিনি।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বিলম্বিত
গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তোলা একটি প্রস্তাবের ওপর গতকাল ভোট হওয়ার কথা। এই প্রস্তাবে যেন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো না দেয়, সে জন্য চলছে দেনদরবার। তাই ভোটাভুটি এক দিন পেছানো হয়। নিরাপত্তা পরিষদে আনা আগের প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে পাস হয়নি।

প্রস্তাবে ‘গাজায় বাধাহীনভাবে মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ করে দিতে জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে সংঘাত বন্ধের’ আহ্বান জানানো হয়। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ওই প্রস্তাবের ভাষায় কাটছাঁট করে নতুন করে ‘জরুরি ভিত্তিতে সংঘাত বন্ধের’ আহ্বান জানানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে ভাষায় আরও বদল আনা হতে পারে।

Link copied!