লোকসভা নির্বাচন

সমীক্ষায় এগিয়ে মোদি- মানেন না মমতা

হাসনাত আসিফ কুশল

জুন ২, ২০২৪, ০৬:০০ পিএম

সমীক্ষায় এগিয়ে মোদি- মানেন না মমতা

এবারের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ৭ দফা ভোটগ্রহণ শেষে বুথফেরত সমীক্ষাগুলোতে উঠে আসছে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সম্ভাবনার কথা। কিন্তু এবার খোদ বুথফেরত সমীক্ষাকেই ভুয়া বললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূল কর্মীদের শক্ত থাকার বার্তা দিয়ে দেশটির একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমাদের রাজ্য নিয়ে যেটা দেখাচ্ছে, তা আমি বিশ্বাস করি না। এটা একেবারে ফেক।”

গতকাল শনিবার বুথফেরত সমীক্ষায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় দল হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সেই সঙ্গে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, পশ্চিমবঙ্গে এবার বিজেপির তুলনায় ভোট কম পেতে পারে তৃণমূল। ১১ আসনে তৃণমূলের ভরাডুবি হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। বলেছেন, “সংবাদমাধ্যম কীভাবে বলছে, ওই আসনে ও জিতবে, অমুক আসনে কে জিতবে? কত টাকার বিনিময়ে? আমি সংবাদমাধ্যমের হিসাব মানি না। কর্মীদের বলবো শক্ত থাকতে। গণনা ভালোভাবে করতে। সংবাদমাধ্যম যা দেখিয়েছে, তার দ্বিগুণ পাবো। সব আসনে আমরা জিতবো।”

সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রণম্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জয়ের বিষয়ে জোরালো আশা করলেও রাজ্যে তৃণমূল কত ভোট পেতে পারে- সেটা খোলাসা করে বলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, “আমি কোনো নম্বরে যাবো না। একটা কথা আপনাদের বলতে পারি, আমরা যেভাবে মাঠে নেমে কাজ করেছি, লোকের চোখ দেখেছি, তাতে আমার কখনও মনে হয়নি মানুষ আমাদের ভোট দেবেন না।”

বুথফেরত সমীক্ষায় মোদির বিজেপি এগিয়ে
গতকাল শনিবার শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষায় উঠে আসে, এবার তৃণমূল নয়, এগিয়ে থাকবে বিজেপি। সেই অনুযায়ী গণমাধ্যমে খবর হয়, নরেন্দ্র মোদিই তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। আর তেমনটা যদি সত্যি সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর পর নরেন্দ্র মোদি ৩ মেয়াদের সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিবেচিত হবেন।

ইন্ডিয়া টুডে ও এক্সিস মাই ইন্ডিয়ার সমীক্ষা বলছে, বিজেপি ২৬-৩১টি আসন পেতে পারে। এছাড়া ১১-১৪টি আসন তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে ০-২টি আসন।

নিউজ টুডেজ ও চাণক্য বলছে, বিজেপি পেতে পারে ২৪টি, তৃণমূল ১৭টি ও বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে একটি আসন।

নিউজ-১৮ তাদের সমীক্ষায় বিজেপিকে ২১-২৪টি, তৃণমূলকে ১৮-২১টি আসন দিয়েছে। বাম ও কংগ্রেস জোটকে কোনো আসন দেয়নি।

বুথফেরত সমীক্ষায় বিজেপির এগিয়ে থাকা মানছেন না মমতা। ছবি: সংগৃহীত

নিউজ নেশন ও টিভি-৯, পোলস্ট্যাট ও পিপলস ইনসাইট তাদের সমীক্ষায় অবশ্য তৃণমূলকে এগিয়ে রেখেছে। নিউজ নেশন বলছে, বিজেপি ১৯টি, তৃণমূল ২২টি ও বাম-কংগ্রেস জোট একটি আসন পেতে পারে। পোলস্ট্যাট  ও পিপলস ইনসাইট বলছে, তৃণমূল ২৪টি, বিজেপি ১৭টি এবং কংগ্রেস একটি আসন পেতে পারে।

বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানান, বুথফেরত সমীক্ষার চেয়ে ৩০টির বেশি আসনে জয় পাবে তার দল। তবে এসব সমীক্ষাকে ‘ভাঁওতা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্তব্য করেছেন, ‘সব বিরোধীদের চিত্রনাট্য’।

কংগ্রেস-সিপিএমকেও ছাড়েননি মমতা
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বিজেপিকেই তুলোধুনা করেননি, সেই জাতীয় কংগ্রেস ও সিপিএমকেও আক্রমণ শাণাতে ছাড়েননি। তৃণমূলের দাবি, বিজেপির হয়ে কাজ করছে কংগ্রেস-সিপিএম। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যতম শরিক ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই রাজ্যে (পশ্চিমবঙ্গ) প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক তেমন প্রভাব ফেলবে না।

মা-মাটি-মানুষের প্রতিবাদী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সিপিএম নাক না গলালে জাতীয় স্তরে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে না। আমার মন্দ লাগে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে সবই ঠিকঠাক চলছে, ঠিকই আছে। আমি ওদের সমর্থনও দিয়েছি। কিন্তু সিপিএম ওদের মনিটরিং করে। সিপিএম কেন ওদের মুখপাত্র হবে? এই জায়গায় আমার প্রশ্ন আছে।”

‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় এলে কী করবে তৃণমূল
সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- ভারতের লোকসভা নির্বাচনে যদি বিজেপিকে হারিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ যদি ক্ষমতায় আসে- তাহলে কি করবে তৃণমূল? আর কি-ই বা সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা? জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা যাবো। তেমন পরিস্থিতি এলে নিশ্চয়ই কথা বলবো। আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।”

Link copied!