পুতিনকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন যে নেতা

ফারহানা জিয়াসমিন

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম

পুতিনকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন যে নেতা

সংগৃহীত ছবি

গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে একের পর এক মৃত্যু হয়েছে পুতিনবিরোধী ও সমালোচকদের। এদের অনেকের মৃত্যু নিয়ে এখনো রহস্য কাটেনি। কারাবন্দি হয়ে, গুলিতে, বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কিংবা বিষপ্রয়োগে মারা গেছেন তাঁরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের বিরোধিতা করার কারণেই এসব ব্যক্তির ওপর নেমে এসেছে খড়্গ। অন্যদিকে পশ্চিমা নেতাদের দাবি, পুতিনের নির্দেশেই এসব মৃত্যুর ঘটনা হয়েছে।

এ মৃত্যু তালিকার শেষ নাম অ্যালেক্সি নাভালনি। ১৬ ফেব্রুয়ারি কারান্তরীণ অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে রাশিয়ার এই বিরোধীদলীয় নেতার। তবে কী কারণে তিনি মারা গেছেন, সে ব্যাপারে এখনো স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি।

পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে নাভালনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বেশির ভাগ সময় পুতিনের সমালোচনা করেছেন নাভালনি। পুতিনের অন্যতম দৃশ্যমান ও অবিচল সমালোচক ছিলেন ৪৭ বছর বয়সী এই নেতা। তাকে রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা মনে করা হতো। আজীবন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘দুর্নীতি’ ও ‘অপশাসন’ নিয়ে কথা বলে গেছেন নাভালনি।

১৯৯৯ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন নাভালনি। এর আগে রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ফাইন্যান্স নিয়ে পড়েছেন। রাজনীতি থেকে তাঁকে সরানোর আগে তিনি বিরোধী দল ইয়াবলোকোতে যোগ দেন। পরে তিনি ‘অ্যান্টিকরাপশন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি দুর্নীতিরোধী সংস্থা গড়ে তোলেন। এ সংস্থার কাজ ছিল ক্রেমলিনের অভিজাত ব্যক্তিদের দুর্নীতির অনুসন্ধান।

নিজের ব্লগেও পুতিন সরকারের দুর্নীতি নিয়ে লিখতেন নাভালনি। ইউটিউবেও পুতিনবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতেন নাভালনি ও তাঁর সমর্থকেরা।

২০১১ সালের ডিসেম্বরে পুতিনের বিরুদ্ধে সরাসরি বিক্ষোভকালে একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন নাভালনি। এরপর ২০১৩ সালে মস্কোর মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এই নেতা। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও ২৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিনের সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নাভালনি।

পরবর্তীতে ২০২০ সালে সার্বিয়ায় নাভালনিকে বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়। জার্মানিতে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। অর্থ আত্মসাতের পুরোনো এক মামলায় দেয়া হয় কারাদণ্ড। এরপর আবার গত বছরের আগস্টে উগ্রপন্থায় উসকানি ও অর্থায়ন এবং একটি উগ্রপন্থী সংগঠন প্রতিষ্ঠার দায়ে নাভালনিকে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। 

পুতিন প্রশাসনের তোলা সব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছিলেন নাভালনি ও তার সমর্থকরা।

গত বছরের ডিসেম্বরে অ্যালেক্সি নাভালনিকে মস্কো থেকে ১৯০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে উত্তরের শহর সাইবেরিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার সবচেয়ে কঠোর কারাগার আইকে–৩ পেনাল কলোনিতে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া, দুটি সন্তান ও অসংখ্য সমর্থক রেখে গেছেন।  

নাভালনি ছিলেন একগুঁয়ে, ব্যঙ্গাত্মক ও ক্যারিশম্যাটিক নেতা। তাঁর একটি ডাকেই রাস্তায় নেমে আসত হাজার হাজার মানুষ। জনতাবাদী এই নেতাকে তরুণরাও অসম্ভব পছন্দ করত। আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তুলনা করতেন তার সমর্থকেরা। পুতিন শাসনামলের ওপর এক অমোচনীয় দাগ হিসেবে থেকে যাবেন বিশ্বের অন্যতম এই ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টকে ভয় পাইয়ে দেয়া অ্যালেক্সি নাভালনি।

Link copied!