নতুন এইচ-১বি ভিসা ফি: কাদের জন্য প্রযোজ্য, কাদের জন্য নয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম

নতুন এইচ-১বি ভিসা ফি: কাদের জন্য প্রযোজ্য, কাদের জন্য নয়

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রশাসনের নতুন এইচ-১বি ভিসা নীতিমালা নিয়ে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। ফলে তারা স্পষ্ট করেছে, দক্ষ কর্মীদের জন্য নির্ধারিত ১ লাখ ডলার ফি কেবল নতুন আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং প্রত্যেক আবেদনের জন্য আলাদাভাবে দিতে হবে। কিন্তু বর্তমান ভিসাধারীদের জন্য এই ফি প্রযোজ্য হবে না।

এর আগে শুক্রবার মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক বলেছিলেন, এই ফি প্রতি বছর দিতে হবে এবং এটি নতুন ভিসা আবেদনকারী ও নবায়ন উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য হবে।

কিন্তু শনিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট নীতিটি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে স্পষ্ট করে বলেন, ‘এটি কোনো বার্ষিক ফি নয়। এটি কেবল একবার দিতে হবে, শুধু নতুন ভিসার জন্য। নবায়ন বা বর্তমান ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’

গতকাল এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

নতুন নির্বাহী আদেশ স্থানীয় সময় রোববার রাত ১২টা থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে এটি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের ব্যাখ্যার আগে অনেক মার্কিন কোম্পানি আতঙ্কে বিদেশি কর্মীদের ভ্রমণ না করতে সতর্ক করেছিল।

সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলের খবরে বলা হয়, শুক্রবার কিছু যাত্রী যারা যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার উদ্দেশ্যে উড়োজাহাজে উঠেছিলেন। তবে ভিসা জটিলতার আশঙ্কায় নেমে যান। কারণ তারা ভয় পাচ্ছিলেন, হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।

লেভিট বলেন, ‘যাদের ইতোমধ্যে এইচ-১বি ভিসা আছে এবং যারা দেশের বাইরে আছেন তাদের ১ লাখ ডলার দিতে হবে না। তারা স্বাভাবিক নিয়মে ভ্রমণ করতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এইচ-১বি ভিসাধারীরা স্বাভাবিক নিয়মেই দেশ ছাড়তে ও পুনরায় প্রবেশ করতে পারবেন।’

এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো বিশেষায়িত দক্ষতা সম্পন্ন বিদেশি কর্মীদের সে দেশে কাজের জন্য স্পন্সর করতে পারে। যেমন বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও কম্পিউটার প্রোগ্রামার। প্রাথমিকভাবে এই ভিসা তিন বছরের জন্য দেওয়া হয়, তবে তা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ছয় বছর পর্যন্ত করা যায়।

এএফপি বলছে, এ ধরনের ভিসা প্রযুক্তি খাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রতি বছর লটারি পদ্ধতিতে যেসব অনুমতি দেওয়া হয়, তার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই ভারতীয় নাগরিকরা পান।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় চার লাখ এইচ-১বি ভিসা অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ছিল নবায়ন।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক উদ্বেগ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ওয়াশিংটনে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। তিনি দাবি করেন, এটি আমেরিকান শ্রমিকদের সহায়তা করবে।

কার্যনির্বাহী আদেশে বলা হয়, এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রাম আমেরিকানদের বদলে কম বেতন ও কম দক্ষ শ্রমিক আনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

এছাড়া ট্রাম্প কয়েক মাস আগে এক মিলিয়ন ডলারের ‘গোল্ড কার্ড’ বসবাসের প্রোগ্রাম ঘোষণা করেন।

ট্রাম্প ওভাল অফিসে আদেশে স্বাক্ষর করার সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘মূল কথা হলো, আমরা ভালো মানুষ আনব এবং তারা আমাদের দেশকে অর্থ দেবে।’

লাটনিক সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন এবং তিনি বারবার বলছিলেন, এই ফি প্রতি বছর দিতে হবে।

লাটনিকের ভাষ্য ছিল, ওই মানুষটি যদি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে প্রতি বছর এক লাখ ডালার দিতে হবে। কোম্পানিগুলোকে এটা এখনই ভাবতে হবে। না হলে তাকে দেশে ফিরে যেতে হবে এবং একজন আমেরিকানকে নিয়োগ দিতে হবে।

যদিও তিনি বলেছিলেন, সব বড় কোম্পানি এতে সহমত পোষণ করছে। আবার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এইচ-১বি আদেশের বিস্তারিত বুঝতে পারছিল না।

মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপিমরগান জানিয়েছে, তাদের এইচ-১বি ভিসা থাকা কর্মীদের একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে, যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রেই থাকেন এবং নতুন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বিদেশে ভ্রমণ না করেন।

ট্রাম্পের সাবেক সহযোগী ইলন মাস্কের মতো টেক উদ্যোক্তারা সতর্ক করেছেন, এইচ-১বি ভিসা কমানোর চেষ্টা বিপজ্জনক। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি খাতের গুরুত্বপূর্ণ চাকরি পূরণে যথেষ্ট দক্ষ লোকবল নেই।

Link copied!