অক্টোবর ১০, ২০২৩, ০৬:২৭ পিএম
সংগৃহীত ছবি
হঠাৎ করেই বিকেলে ছড়িয়ে পড়ে নোবেলবিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (৮৯) মারা গেছেন। এমনকি সদ্য নোবেলজয়ী মার্কিন ইতিহাসবিদ ক্লাউডিয়া গোলডিন টুইট (এক্স) করে অমর্ত্য সেনের মৃত্যু তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাতাসের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে অমর্ত্য সেনের মৃত্যু সংবাদ। তার কিছুক্ষণ পরই তাঁর মেয়ে নন্দনা দেব সেন জানান, বাবার মৃত্যু সংবাদ সত্যি নয়।
পরিবারের সাথে ভালো সময় কাটানোর ছবি শেয়ার করে এক্স-এ নন্দনা সেন লিখেছেন, “বন্ধুরা, আপনাদের উদ্বেগের জন্য ধন্যবাদ কিন্তু এটা ভুয়া খবর: বাবা পুরোপুরি ভালো আছেন। আমরা কেমব্রিজে পরিবারের সাথে একটি চমৎকার সপ্তাহ কাটিয়েছি- গত রাতেও বিদায় নেয়ার সময় তিনি সবসময়ের মতোই আমাদের আলিঙ্গন করেছেন। তিনি হার্ভার্ডে সপ্তাহে দুটি কোর্স পড়াচ্ছেন, তার ‘জেন্ডার বুক’ বই নিয়ে কাজ করছেন- আগের মতোই ব্যস্ত!”
নন্দনা আরও লিখেন, ‘দয়া করে আপনারা কি এই অবাস্তব ভুয়া খবর প্রচার বন্ধে সাহায্য করবেন? বিনা দ্বিধায় আমার বার্তাটি শেয়ার করুন এবং আপনাদের সংহতিসূচক মধুর বার্তাগুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।’
তবে পরে জানা যায়, তার মৃত্যুর খবরটি গুজব আর ক্লদিয়া গোল্ডিনের ওই টুইটার অ্যাকাউন্ট ভুয়া ছিল।
এদিকে বাংলাদেশ, ভারত ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অমর্ত্য সেনের মৃত্যুর সংবাদ। ভারতের ডেকান হেরাল্ড, টাইমস অব ইন্ডিয়া, জি নিউজও মৃত্যু সংবাদটি প্রকাশ করে।
সমকাল, সময় সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাকের মতো জাতীয় ধারার মতো বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এই সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
উল্লেখ্য, দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে ব্যাংক অফ সুইডেন পুরস্কার (যা অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার হিসেবে পরিচিত) লাভ করেন বাঙালি অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেন।
জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য মানব উন্নয়ন সূচক উদ্ভাবন করেন তিনি। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হয়েও ন্যাশনাল হিউম্যানিটিস মেডেলে ভূষিত হন তিনি।
বর্তমানে তিনি টমাস ডাব্লিউ ল্যামন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক অধ্যাপক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি হার্ভার্ড সোসাইটি অফ ফেলোস, ট্রিনিট্রি কলেজ, অক্সব্রিজ এবং ক্যামব্রিজের একজন সিনিয়র ফেলো।
এছাড়াও তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হেলথ ইমপ্যাক্ট ফান্ডের অ্যাডভাইজরি বোর্ড অব ইনসেন্টিভ ফর গ্লোবাল হেল্থ্-এর সদস্য। তিনিই প্রথম ভারতীয় শিক্ষাবিদ যিনি একটি অক্সব্রিজ কলেজের প্রধান হন। এছাড়াও তিনি নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবেও কাজ করেছেন।
অমর্ত্য সেনের লিখিত বই বিগত চল্লিশ বছর ধরে প্রায় তিরিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি ইকোনমিস্ট ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির একজন ট্রাস্টি। ২০০৬ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে অনূর্ধ্ব ষাট বছর বয়সী ভারতীয় বীর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১০ সালে তাকে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান দেওয়া হয়।