গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো প্রচেষ্টা চলার মধ্যে হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল এ উপত্যকায় আগ্রাসন বন্ধ না করলে জিম্মি মুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনায় যাবে না তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটি এ অবস্থানের কথা জানিয়েছে।
এদিকে গতকাল গাজায় ইসরায়েল হামলা আরও জোরদার করেছে। হামাস বলেছে, গত ৭ অক্টোবর নজিরবিহীন ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর উপত্যকাটিতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ২০ হাজার।
হামাসের প্রকাশ করা বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের জাতীয় সিদ্ধান্ত হলো, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তি বা বন্দী বিনিময় চুক্তি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হবে না।
গাজায় হামলা জোরদার
গাজায় একদিকে মানবিক বিপর্যয় কমানোর চেষ্টায় বিভিন্ন দেশের যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার নতুন উদ্যোগ, অন্যদিকে জিম্মি মুক্তি নিয়ে হামাসের অনড় অবস্থানের মধ্যেই উপত্যকাটিতে গতকাল ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে গাজা একরকম যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকায় হামলায় হতাহতের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে তথ্য জানা যায়নি।
এদিন গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বেশ কিছু বিস্ফোরণের ঝলকানি ও এর পরপরই ঘন কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় ইসরায়েল সীমান্তের ভেতর থেকে। এ ছাড়া অনবরত শোনা যাচ্ছিল ইসরায়েলি বিমান থেকে গোলাবর্ষণের শব্দ।
নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির প্রস্তুতি
এদিকে গাজায় অবিলম্বে হামলা বন্ধ ও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বাতিল হয়ে গেছে। গাজা নিয়ে পরিষদে আরেকটি প্রস্তাবে গতকাল ভোটাভুটি হওয়ার কথা।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি গতকাল সতর্ক করে বলেছেন, গাজা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ কোনো প্রস্তাব পাস করতে ব্যর্থ হলে এর অর্থ হবে ‘বিপজ্জনক দ্বিমুখী নীতি’র অনুসরণ। তিনি আরও বলেন, ভোটাভুটি হতে যাওয়া ওই খসড়া প্রস্তাবে গাজায় ত্রাণ তৎপরতা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আল-জাজিরা বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদে ওই প্রস্তাবে ভোটাভুটি এখন পর্যন্ত তিন দফা পিছিয়েছে। তবে পরিষদের বর্তমান সভাপতি ও জাতিসংঘে ইকুয়েডরের রাষ্ট্রদূত হোসে জাভিয়ার দ্য লা গাসকা লোপেজ-ডমিংগুয়েজ গতকাল এ ভোট হওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন।
বর্তমানে গাজায় যেকোনো ধরনের ত্রাণ সরবরাহের ওপর নজরদারি করে থাকে ইসরায়েল। উপত্যকায় কী ঢুকবে আর কী ঢুকবে না, সে সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকে দেশটি। তবে খসড়া প্রস্তাবে জাতিসংঘের বিশেষ তদারকিতে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গাজায় ২০ হাজার মানুষ নিহত
আল-জাজিরা জানায়, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার সরকারি সংবাদমাধ্যম দপ্তরের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দপ্তর জানিয়েছে, গাজায় নিহত মানুষের মধ্যে অন্তত আট হাজার শিশু রয়েছে। নিহত নারীর সংখ্যা অন্তত ৬ হাজার ২০০। অন্যদিকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহত হন ১ হাজার ১৩৯ জন। এ হিসাব ইসরায়েল সরকারের।
হামাসের হামলার জবাবে ৭ অক্টোবরই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর দুই মাসের বেশি সময় পেরিয়েছে। মাঝে যুদ্ধবিরতির কয়েক দিন বাদে গাজায় বিরামহীন হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলা থেকে মসজিদ, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, আশ্রয়শিবির—কিছুই বাদ যায়নি।
‘বিনা বিচারে’ অন্তত ১১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা
এএফপির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনারা বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের বিনা বিচারে মেরে ফেলছেন বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর। দপ্তর বলেছে, তারা এই খবর পেয়েছে যে গাজায় অন্তত ১১ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে কোনো ধরনের বিচার বা প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ ছাড়াই হত্যা করেছেন সেনারা। এটি যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে।