বৌদ্ধ উৎসবে মিয়ানমারে প্যারাগ্লাইডার থেকে বোমা হামলা, নিহত অন্তত ২৪

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৮, ২০২৫, ১২:২৮ পিএম

বৌদ্ধ উৎসবে মিয়ানমারে প্যারাগ্লাইডার থেকে বোমা হামলা, নিহত অন্তত ২৪

ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে একটি উৎসব ও প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে প্যারামোটর হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাসিত ন্যাশনাল ইউনিটি সরকারের এক মুখপাত্র।

সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী থাডিংজুত উৎসব উদ্‌যাপনে চৌং উ এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ১০০ জন, সেসময় একটি মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার থেকে ভিড় লক্ষ্য করে দুটি বোমা ফেলা হয় বলে জান্তাবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের এক স্থানীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।

ছুটির দিনের ওই আয়োজনে ক্ষমতাসীন জান্তার নীতির বিরুদ্ধে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিও ছিল।

২০২১ সালের অভ্যুত্থানে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমার মূলত গৃহযুদ্ধের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। এতে এরই মধ্যে ৫ হাজারের বেশি বেসামরিক প্রাণ হারিয়েছেন বলে অনুমান জাতিসংঘের।

সোমবারের ওই জমায়েতে আকাশপথে হামলার সম্ভাবনা আছে বলে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স আগেই খবর পেয়েছিল; যে কারণে প্রতিবাদ কর্মসূচি তাড়াতাড়ি শেষ করারও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু প্যারাগ্লাইডার ধারণার আগেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়, বলেছেন ওই কর্মকর্তা।

“মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যে তারা চলে আসে ও বোমা ফেলে। যখন প্রথম বোমাটি পড়ে, আমি মাটিতে পড়ে যাই, তারপরও বোমা আমার হাঁটুর নিচের দিকে আঘাত হানে। আমার পাশেই মানুষ মারা গিয়েছিল,” বলেছেন তিনি।

স্থানীয়রা বিবিসিকে বলেছেন, বোমার ধ্বংসযজ্ঞ এত প্রকট ছিল যে মৃতদেহ শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে পড়েছিল।

“শিশুরা পুরোপুরি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল,” প্যারিসভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করা এক নারী।

বোমা হামলার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তবে মঙ্গলবারের শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছেন। এখনও ‘ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ সংগ্রহ’ চলছে, জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার দেওয়া বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জান্তার মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার ব্যবহারকে ‘উদ্বেগজনক প্রবণতা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

এই মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডারের সাহায্যে যে কেউ কাছাকাছি দূরত্ব থেকে উড়ে এসে হামলা চালিয়ে আবার দ্রুত সরে যেতে পারে।

সামরিক উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের ঘাটতি মেটাতে জান্তা ক্রমশ এ ধরনের প্যারামোটর হামলায় নির্ভরশীল হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। গত কয়েক বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তার জন্য সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে।

“মিয়ানমারের বেসামরিকদের যে দ্রুত সুরক্ষা দরকার, এ হামলাকে সে সংক্রান্ত একটি জরুরি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা উচিত,” বলেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিয়ানমার গবেষক জো ফ্রিম্যান।

তিনি জান্তার ওপর চাপ বাড়াতে আসিয়ানের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান যেন মিয়ানমার বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি বদলায় সে তাগাদাও দিয়েছেন তিনি। এ মাসের শেষ দিকেই আসিয়ানের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

সোমবারের ওই মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া লোকজন সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদান ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জান্তার ঘোষণার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন শুরু হওয়ার কথা। ২০২১ সালে জান্তা ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটিতে এটিই হতে যাচ্ছে প্রথম নির্বাচন।

সমালোচকরা অবশ্য এ নির্বাচন নিয়ে মোটেও আশাবাদী নন। নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠু তো হবেই না, উল্টো জান্তাকে অবাধ ক্ষমতা দেবে, আশঙ্কা তাদের।

Link copied!