নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান নির্ধারণে চলছে বৈঠকের প্রস্তুতি, সুশীলার পর আলোচনায় কুল মান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম

নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান নির্ধারণে চলছে বৈঠকের প্রস্তুতি, সুশীলার পর আলোচনায় কুল মান

ছবি: সংগৃহীত

নেপালের চলমান রাজনৈতিক সংকট এখন এক নতুন মোড় নিয়েছে। জেন-জিদের নেতৃত্বে তিন দিনের ব্যাপক দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই গণবিক্ষোভে অন্তত ৩১ জনের প্রাণহানি এবং ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হওয়ার পর নেপালি সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য নেপালি সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আলোচনা চলছে।

আন্দোলনের শুরুটা ছিল খুবই সাধারণ। নেপালের উচ্চ বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত তরুণ সমাজ যখন তাদের আয়ের অন্যতম উৎস, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন এক্স (পূর্বে টুইটার) এবং ইউটিউবের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ জানায়, তখন থেকেই উত্তেজনার শুরু। সরকারের যুক্তি ছিল, এই প্ল্যাটফর্মগুলো দেশের আইন লঙ্ঘন করছে। কিন্তু বহু নেপালি যুবকের কাছে এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে উপার্জিত অর্থ ছিল তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ততক্ষণে আন্দোলন লাগামহীন হয়ে পড়ে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী দুর্নীতিমুক্ত সরকার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে।

বিক্ষোভ দ্রুত সহিংস রূপ ধারণ করে। উত্তেজিত জনতা সরকারি ভবন, মন্ত্রীদের বাসভবন, এমনকি পার্লামেন্ট ভবনেও আগুন ধরিয়ে দেয়। সাবেক মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলার খবরও সামনে আসে। এর পরই প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। তার বর্তমান অবস্থান অজানা, তবে তাকে একটি সামরিক বিমানে কাঠমান্ডু ছাড়তে দেখা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী অলির পদত্যাগের পর দেশে কার্যত কোনো সরকার নেই। এই পরিস্থিতিতে নেপালি সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল জানিয়েছেন, যতক্ষণ না একটি নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে।

এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার নেপালি সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল এবং ‘জেন-জি’ যুব প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।

সুশীলা কারকি কে?

সুশীলা কারকি নেপালের প্রথম এবং একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে পরিচিত। ৭৩ বছর বয়সী কারকি সৎ এবং নির্ভীক বিচারক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। কাঠমান্ডু সিটি মেয়র বালেন্দ্র শাহও সুশীলা কারকির নাম সমর্থন করেছেন। তবে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি ছোট অংশ তার বিরোধিতা করছে। তাদের যুক্তি, নেপালের সংবিধান অনুযায়ী সাবেক বিচারকদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনুমতি নেই এবং কারকির বয়স বেশি।

কুল মান ঘিসিংয়ের নামও আলোচনায়

সুশীলা কারকি ছাড়াও নেপালের বিদ্যুৎসংকট সমাধানকারী প্রকৌশলী কুল মান ঘিসিংয়ের নামও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে আলোচনায় এসেছে। তাকে ‘দেশপ্রেমিক এবং সবার প্রিয়’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের প্রথম পছন্দ ছিলেন মেয়র বালেন্দ্র শাহ, তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় কুল মান ঘিসিং এবং সুশীলা কারকির নাম উঠে আসে।

এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো এখনো অস্পষ্ট। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আজকের বৈঠক এই সংকট সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে।

Link copied!