ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইরান, কাতার ও সৌদি আরব।
এর আগে চলতি সপ্তাহে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পাকিস্তানের বিমান হামলার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। খবর প্রথম আলো।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারিজমি গতকাল শনিবার রাতে বলেন, আফগান ভূখণ্ডে বারবার পাকিস্তানের সীমানা লঙ্ঘন ও বিমান হামলার জবাবে তালেবান ‘সফল প্রতিশোধমূলক অভিযান’ চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, অভিযানটি মধ্যরাতে শেষ হয়েছে।
প্রথম আলোর কলকাতা সংবাদদাতা শুভজিৎ বাগচী কাবুল থেকে বেশ অনেকটা দূরে পানশির প্রদেশে রয়েছেন। পানশিরের গর্ভনরের মুখপাত্র সাইফুদ্দিন লাটোন প্রথম আলোর সংবাদদাতাকে জানান, গতকাল রাতে সীমান্ত জুড়ে সংঘর্ষ হয়েছে। মূলত আফগানরা হামলা চালিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
সাইফুদ্দিন লাটোন আরও বলেন, পাকিস্তানিদের কিছু মরদেহ তারা নিয়ে আসতে পেরেছেন। গভর্নর ভবনের ওপর গতকাল রাতে ড্রোন হামলার হুমকি ছিল বলেও তিনি জানান।
অন্যদিকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভির দাবি, আফগানিস্তান বিনা উসকানিতে এ হামলা করেছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, পাকিস্তান প্রতিটি হামলার উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে।
মোহসিন নাকভি এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, বেসামরিক জনগণের ওপর আফগান বাহিনীর গুলিবর্ষণ আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। পাকিস্তানের সাহসী বাহিনী দ্রুত ও কার্যকরভাবে এর জবাব দিয়েছে। কোনো ধরনের উসকানি সহ্য করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে রেডিও পাকিস্তানের খবরে দাবি করা হয়, সীমান্তের অন্তত ছয়টি স্থানে আফগানিস্তান হামলা করেছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এসব হামলার কড়া জবাব দিয়েছে। রেডিও পাকিস্তান রাতে গোলাগুলির একটি ভিডিও শেয়ার করেছে। তবে সংঘর্ষ শেষ হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করেনি সংবাদমাধ্যমটি।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলার দুদিন পর এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটল। গত বৃহস্পতিবারের ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে তালেবান।
তবে ইসলামাবাদ ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি। বরং তারা অভিযোগ করেছে, আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসন তেহরিক-ই–তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে; যারা ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
নয়াদিল্লি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে তালেবান জানিয়েছে, তারা তাদের ভূখণ্ড অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয় না।
ক্রমবর্ধমান এ উত্তেজনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রতিবেশী দেশগুলো। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—দুই দেশকেই সংযম প্রদর্শন করতে হবে।’ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে।’
কাতারও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এ ধরনের উত্তেজনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।’
একইভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সংযম এবং উত্তেজনা এড়িয়ে সংলাপ ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানাচ্ছে সৌদি আরব।