অক্টোবর ১০, ২০২৫, ০৫:০০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিমুক্তি চুক্তি অনুমোদন করার পর গাজার উল্লেখযোগ্য অংশ থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যেতে শুরু করেছে বলে খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
এদিকে গাজার বাস্তুহারা পরিবারগুলোও পশ্চিমের আবাসিক এলাকা থেকে গাজার মূল অংশে ফিরতে শুরু করেছেন, যেখান থেকে তাদের জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আল জাজিরা লিখেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কিছু ব্রিগেড ও ডিভিশনকে গাজার কেন্দ্রীয় অংশ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গাজার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নুসেইরাত আশ্রয় শিবির থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো উত্তর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। তবে তারা এখনও নেতজারিম করিডোরে প্রবেশ করতে পারেনি, যেখানে আগে ইসরায়েলি সেনারা অবরোধ করে রেখছিল।
পরিবারগুলো অপেক্ষায় আছে, ওই অঞ্চল থেকে ইসরায়েলের শেষ ট্যাংকটি চলে যাওয়ার পর তারা সেখানে প্রবেশ করতে চায়।
তবে ভোর থেকেই ইসরায়েলি ড্রোন, যুদ্ধবিমান এমনকি যুদ্ধজাহাজের তৎপরতা বেড়েছে। সকালে যেসব জায়গায় মানুষ বাড়ি ফেরার জন্য জড়ো হয়েছিল, সেসব জায়গায় হামলারও খবর এসেছে।
আল-আহলি হাসপাতালের বরাত দিয়ে আল জাজিরা লিখেছে, সকাল থেকে গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকা থেকে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি হামলার খবর এসেছে খান ইউনিসের দিক থেকেও। দক্ষিণ গাজার ওই অংশে ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করেছে বলে খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
গাজার সিভিল ডিফেন্স টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে বলেছে, যেসব এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী এখনও অবস্থান করছে, সেখানে যেন কেউ না যায়।
আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা এবং কর্তৃপক্ষের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত গাজা সিটির সীমান্তবর্তী এলাকায় কাউকে না যেতে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিশরের শার্ম আল শেখে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে তিন দিনের পরোক্ষ আলোচনার পর বৃহস্পতিবার একটি চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ছাড়াও মিশর, কাতার ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।
ইসরায়েল সরকার শুক্রবার প্রথম প্রহরে ওই চুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়। এর মাধ্যমে গাজায় সংঘাত বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার কথা।
চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল সরকারের অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘ইয়েলো লাইন’ পর্যন্ত সেরে যাবে। গাজায় হামলা বন্ধ করে মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ খুলে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে হামাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ২০ জন জীবিত জিম্মি এবং ২৮ জনের মৃতদেহ ফেরত দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
তাদের মধ্যে ২৭০ জন বিভিন্ন অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এবং বাকি ১৭০০ জন বিনাবিচারে বন্দি, যারা ২০২৩ সালের হামলায় জড়িত ছিলেন না।
তাদের মধ্যে ২২ জন কিশোরও রয়েছে। এছাড়া গাজার ৩৬০ জন যোদ্ধার মৃতদেহও ফেরত দেবে ইসরায়েল।
গাজার যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে মার্কিন সেনাবাহিনী দুইশ সেনার একটি টাস্কফোর্স মোতায়েন করবে। তবে তারা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ভেতরে ঢুকবে না।
হামাসের নির্বাসিত গাজাপ্রধান খলিল আল-হায়া বলেছেন, যুদ্ধ যে শেষ হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেয়েছেন।
গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছরের ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে ওই অঞ্চল, দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।
বন্দি-জিম্মি বিনিময় কার্যকর হওয়ার মধ্যেই খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা বহন করা অসংখ্য ট্রাকের গাজায় প্রবেশ করার কথা রয়েছে। এই সহায়তার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে গাজার লাখ লাখ মানুষ, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়ে যাদের বেশিরভাগই এখন বিভিন্ন তাঁবুতে আশ্রয় নিয়ে আছেন।