অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ থেকে আটক হওয়া সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তাকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে। ইসরায়েলের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ফেরার পর এ অভিযোগ করেন ওই নৌবহরে অংশ নেওয়া কয়েকজন আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মী।
এদিকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩৭ জনকে গতকাল শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৬ জন তুরস্কের নাগরিক। অন্যরা যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশের অধিকারকর্মী বলে জানান তুরস্কের কর্মকর্তারা।
বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে গতকাল ইস্তাম্বুলে ফেরেন তুরস্কের সাংবাদিক এরসিন সেলিকও। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া সেলিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনি দেখেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতন করেছে, মাটির ওপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে এবং ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করেছে।
ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে একই কথা বলেন মালয়েশিয়ার অধিকারকর্মী হাজওয়ানি হেলমি ও যুক্তরাষ্ট্রের উইন্ডফিল্ড বিবার। তাদের ভাষ্যমতে, থুনবার্গকে ধাক্কা দিয়ে তাঁর গায়ে জোর করে ইসরায়েলি পতাকা মুড়িয়ে দেওয়া হয়।
হাজওয়ানি হেলমি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা ছিল দুর্বিষহ। ওরা আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করেছে।’ আটক করার পর অধিকারকর্মীদের খাবার, সুপেয় পানি ও ওষুধ দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
উইন্ডফিল্ড বিবার অভিযোগ করেন, থুনবার্গের সঙ্গে ভয়ানক আচরণ করা হয়েছে। তাকে প্রচারের মাধ্যম বানানো হয়েছে। অভিজ্ঞতা হাতড়ে এই মার্কিন বলেন, একটা কক্ষে ইসরায়েলের উগ্র দক্ষিণপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির প্রবেশ করার পর সেখানে ধাক্কা মেরে গ্রেটাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
ইতালির সাংবাদিক লরেঞ্জো আগোস্তিনোও গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক হয়েছিলেন। তিনিও থুনবার্গের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কথা জানান। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলুকে তিনি বলেন, ‘গ্রেটা থুনবার্গ একজন সাহসী নারী। বয়স মাত্র ২২ বছর। তাকে অপমান করা হয়েছে। তার গায়ে ইসরায়েলি পতাকা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে একটি ট্রফির মতো প্রদর্শন করা হয়েছে।’
দুর্ব্যবহারের কথা জানান আটক হওয়ার পর ফিরে আসা আরও কয়েকজন অধিকারকর্মী। তুরস্কের টেলিভিশন উপস্থাপক ইকবাল গুরপিনার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করা হয়েছে। তিন দিন ধরে আমাদের খাবার দেওয়া হয়নি, পানি দেওয়া হয়নি। টয়লেটে থাকা পানি খেতে হয়েছে। ভীষণ গরম ছিল। আমরা রীতিমতো ঝলসে গেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজাবাসীর সঙ্গে আসলে কী ঘটছে, এ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।’
তুরস্কের অধিকারকর্মী আয়চিন কানতুগলু ইসরায়েলি বন্দিশালায় রক্তমাখা দেয়ালে আগের বন্দীদের নানা লেখা দেখতে পাওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, মায়েরা নিজেদের সন্তানের নাম দেয়ালে লিখে গেছেন। আমরা আসলেই কিছুটা অনুভব করতে পেরেছি, ফিলিস্তিনিরা কোন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন।’
ইতিমধ্যে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানান, তার দেশের ২৬ জন নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে ১৫ জন এখনো ইসরায়েলে আটক রয়েছেন।
আটক হওয়া অধিকারকর্মীদের বরাতে ইসরায়েলি অধিকার সংস্থা আদালাহ জানিয়েছে, বন্দীদের হাত বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের খাবার, পানি, ওষুধ দেওয়া হয়নি। টয়লেটে যেতে দেওয়া হয়নি। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। তাদের আইনি অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।