যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া আধিপত্য, বিশেষ করে মার্কিন ডলারের প্রতিপ্রত্তি কমাতে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে নতুন অর্থনৈতিক জোট ব্রিকস। শুরুতে অর্থনৈতিক এই জোট গঠিত হয়েছিলো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে। পরে অবশ্য সদস্যসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯।
ব্রিকসে যোগ দিয়েছে মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এছাড়া তুরস্ক, আজারবাইজান ও মালয়েশিয়া নতুন এই অর্থনৈতিক জোটে যোগ দেয়ার আবেদন করেছে।
চীনের নেতৃত্বাধীন ব্রিকস ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। কারণ, এই জোটভুক্ত দেশগুলোতে বসবাস করে বিশ্বের ৪৫ শতাংশ মানুষ এবং তাদের দখলে রয়েছে দুনিয়ার ৩০ ভাগ ভূমি। এই দেশগুলো মার্কিন বলয় থেকে বেরিয়ে, নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতির সম্প্রসারণ ঘটাতে চায়।
মার্কিন ডলারের পরিবর্তে আলাদা মুদ্রা চালু করতে চায় তারা, যা দিয়ে নিজেদের মধ্যে পণ্য লেনদেন করা হবে। সবশেষ অক্টোবরে ব্রিকসের বৈঠকে এমন আলোচনায় একাত্মতা পোষণ করেছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ব্রিকসের বাকি দেশগুলো।
স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকার জন্য ক্রমাগত হুমকি হয়ে উঠছে ব্রিকস। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই ব্রিকস নিয়ে সতর্ক করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিকসের নতুন মুদ্রা চালু করার ঘোর বিরোধী তিনি।
তাই ব্রিকসের এই নীতির বিরোধিতা করে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বাকি দেশগুলোকে সতর্কবাণী দিয়েছেন ট্রাম্প। বলেছেন, নতুন মুদ্রা চালুর পথে হাঁটলে দেশগুলোর পণ্য আমদানিতে শতভাগ শুল্ক আরোপ করা হবে।
আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসার পরপরই তিনি শুল্ক যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
এরি মধ্যে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ব্রিকস দেশগুলো ডলার থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে, সেই ধারণাটি শেষ হয়ে গেছে। এই দেশগুলোর কাছ থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন যে, তারা নতুন ব্রিকস মুদ্রা তৈরি করবে না। তবে সেটি যদি তারা করে, তাহলে শতভাগ শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে।
আইএমএফের হিসাবে বিশ্ব বৈদেশিক মুদ্রার ৫৮ শতাংশই মার্কিন ডলার। আর প্রধান প্রধান পণ্য বিশেষ করে তেলের বাণিজ্য নিষ্পত্তি হয় ডলারের মাধ্যমে। কিন্তু ব্রিকসের প্রভাব বেড়ে চলায় ডলারের এই নিরঙ্কুশ আধিপত্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকেই ব্রিকসবিরোধী অবস্থানের কথা স্পষ্টভাবে বলে আসছেন ট্রাম্প। ভোটের প্রচারের সময় তিনি শুল্ক বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তখন বলেছিলেন, আমরা সাধারণত শুল্ক চার্জ করি না। আমি সেই প্রক্রিয়াটি শুরু করেছিলাম। কাভার্ড ভ্যান এবং ছোট ট্রাকের ওপর শুল্ক বাড়ানোর সুফল মিলেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীন ও অন্যান্য দেশ বেশি শুল্ক আরোপ করে বলে মনে করিয়ে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেন, চীন আমাদের পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক চার্জ করে এবং এদিক থেকে ব্রাজিলও একটি বড় শুল্ক আরোপকারী দেশ।
আরও পড়ুন: নতুন এফবিআই প্রধান কে এই ক্যাশ প্যাটেল!
আর এক্ষেত্রে ভারত সবচেয়ে বেশি এগিয়ে বলে ধারণা দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া ট্রাম্পের। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে নিজের গভীর সম্পর্কের কথা জানালেও শুল্ক আরোপ নিয়ে মার্কিন স্বার্থের বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘সবার মধ্যে সবচেয়ে বড় শুল্ক আরোপকারী দেশ হলো ভারত। তারা সম্ভবত নানা উপায়ে চীনের চেয়েও বেশি শুল্ক নেয়। কিন্তু তারা এটা করে হাসিমুখে। তারা বোঝায় এটা খুব সামান্য চার্জ। তারা বলে ভারত থেকে কেনার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’
ট্রাম্প বলে আসছেন যে, বিশ্ব বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের আধিপত্য খর্ব করতে পারবে না ব্রিকস। আর যারা এটা করার চেষ্টা করবে তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক থাকবে না বলেও ধারণা দিয়েছেন তিনি।
তবে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, প্রাথমিক বৈশ্বিক মুদ্রার রিজার্ভে অদূর ভবিষ্যতেই হুমকির মুখে পড়তে পারে মার্কিন ডলারের আধিপত্য।