উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়োয়েরি মুসেভেনির ছেলে, দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রধান মুহুজি কাইনেরুগাবা। ফাইল ছবি। রয়টার্স থেকে নেওয়া
পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান জেনারেল মুহুজি কাইনেরুগাবা সীমান্তলাগোয়া গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বুনিয়ায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন।
শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে এক পোস্টে তিনি বুনিয়ার ‘সকল বাহিনীকে’ অস্ত্র সমর্পণে ২৪ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পররাষ্ট্র সংক্রান্ত নানান বিষয়ে উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার জন্য আগে থেকেই খ্যাত কাইনেরুগামা বলেছেন, বুনিয়াতে হামলার ব্যাপারে উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়োয়েরি মুসেভেনি তাকে সর্বময় ক্ষমতা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি জেনারেল কাইনেরুগাবার বাবা।
সামরিকপ্রধানের হুমকির ব্যাপারে উগান্ডার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে শনিবার কোনো প্রমাণ হাজির না করেই কাইনেরুগাবা দাবি করেন, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে বাহিমা সম্প্রদায়ের সদস্যদের হত্যা করা হচ্ছে।
“আমার আপনজন, বাহিমাদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। যারা আমার লোকজনকে আক্রমণ করছে তাদের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এই পৃথিবীর কেউ আমার লোকজনকে হত্যা করে ভাবতে পারে না যে সে পার পেয়ে যাবে,” বলেছেন তিনি।
“বুনিয়া দ্রুতেই ইউপিডিএফের হাতে আসবে,” পৃথক এক পোস্টে উগান্ডা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের নাম উল্লেখ করে এমনটাই বলেছেন তিনি।
শনিবার আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) সম্মেলনের সাইডলাইনে কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রী জুডিথ সুমিনোয়া রয়টার্সকে বলেছেন, কাইনেরুগাবার মন্তব্য নিয়ে তার সরকারের ‘বলার কিছু নেই’।
উগান্ডার শীর্ষ সামরিক কর্তা কাইনেরুগাবাকে প্রেসিডেন্ট মুসেভেনির উত্তরসূরী বিবেচনা করা হয়। বুনিয়ায় তার আক্রমণের হুমকি এখনি কঙ্গোর সরকারি বাহিনী ও তাদের মিত্রদের সঙ্গে রুয়ান্ডাসমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহীদের সংঘাত বিস্তৃত আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার মার্চ ২০২৩ মুভমেন্ট বা এম২৩-র এক নেতা জানিয়েছেন, বিদ্রোহীরা কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বুকাভুতে প্রবেশ করেছে।
গত মাসের শেষ দিকে বিদ্রোহীরা পূর্বাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শহর গোমা দখলে নিয়েছিল।
ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের একাধিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছিল, উগান্ডা ইসলামি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতার লক্ষ্যে পূর্ব কঙ্গোতে এক হাজারেরও বেশি অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে।
তুতসি সম্প্রদায় নেতৃত্বাধীন এম২৩ বিদ্রোহীদের উগান্ডাও সমর্থন দিচ্ছে বলে মত জাতিসংঘের একাধিক বিশেষজ্ঞের।
কাইনেরুগাবা নিয়মিতই রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগাবেকে সমর্থন দিতে দেখা গেছে। কাগামে এম২৩ বিদ্রোহীদের পাশাপাশি রুয়ান্ডার সেনারাও কঙ্গোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এমন অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন।
২০২২ সালে কাইনেরুগাবা এম২৩-কে ‘আমাদের ভাই’ বলে অভিহিত করেছিলেন, যারা কঙ্গোতে তুতসিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়ছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কঙ্গোর ইতুরি প্রদেশে যে উগান্ডার অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত, হুমকির মাধ্যমে সে সংক্রান্ত বার্তাই দিলেন কাইনেরুগাবা।
বুনিয়া ইতুরির রাজধানী।
“মনে হচ্ছে, উগান্ডা এই বার্তা দিয়েছে যে তারা ‘নিজেদের ভূখণ্ড’ দাবি করছে। এই সব কিছুর সঙ্গই ১৯৯৮ ও দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধের উদ্বেগজনক সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে, যখন ভূখণ্ড নিয়ে উগান্ডা ও রুয়ান্ডার মধ্যে এমন বিভাজন ছিল,” রয়টার্সকে বলেছেন অ্যান্টওয়ের্প বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফ টিটেসা।