গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে প্রাণ হারায় ১২০০ ইসরায়েলি। অন্যদিকে প্রায় ২৪০ জনকে হামাস জিম্মি করেছে বলে দাবি করে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলা ও জিম্মির পাল্টা জবাবে ফিলিস্তিনি অব্যাহত হামলা চালায় ইসরায়েল। দেড় মাস ধরে চলমান এই হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে সাড়ে ৫ হাজারই শিশু।
চলমান এই মৃত্যুর মিছিলকে ‘বিস্ময়কর এবং অগ্রহণযোগ্য’ বলে আবারও মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের প্রধান গুতেরেস। কিন্তু এই মানবিক যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ছাপিয়ে সামনে এসেছে বন্দি বিনিময় ইস্যু। জানা গেছে পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে জিম্মি নারী ও শিশুদের মুক্তির বিষয়ে দর–কষাকষি করছে ইসরায়েল ও হামাস।
গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দর কষাকষির মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের প্রধানমন্ত্রী আবদুলরহমান আল-থানি বলেন, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব। সম্ভাব্য চুক্তির পথে চ্যালেঞ্জ ‘খুবই সামান্য’ এবং প্রশাসনিক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে জানান তিনি। অন্যদিকে এই দর কষাকষিতে যুক্ত থাকা মার্কিন কর্মকর্তারা জানান খুব জটিল, অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় হলেও আলোচনায় অগ্রগতি এসেছে।
এর আগে শনিবার সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট–এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে জিম্মি নারী-শিশুদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে ইসরায়েল, হামাস ও যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে ‘ছয় পাতার একটি চুক্তি’ তুলে ধরা হয় যেখানে বলা হয় সমঝোতার আওতায় সব পক্ষকে কমপক্ষে পাঁচ দিনের জন্য যুদ্ধ স্থগিত করতে হবে। এ সময়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টা পরপর ৫০ জন বা তার বেশি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এমনকি গাজায় পাঠানো ‘মানবিক ত্রাণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর’ কথাও বলা হয়। ওই ত্রাণের মধ্যে বিশেষ করে ‘জ্বালানির’ কথা উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু চুক্তির কথা নাকচ করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেননি তারা। তবে চেষ্টা চলছে।
একদিকে হামাস-ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যকার লড়াই ক্রমশ গাজার বৃহত্তম শরণার্থী শিবির জাবালিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করছেন হামাসের হাতে থাকা বন্দিদের মুক্ত করার জন্য একটি চুক্তি প্রায় সম্পন্ন হওয়ার দিকে।
এই চুক্তি না হওয়ার কথা প্রকাশ্যে আসার পর গাজায় হামাস-ইসরায়েল সংঘাত আরও বেড়ে গিয়েছে। রাতভর হামলায় জাবালিয়া শিবিরেও আহত-নিহতের সংখ্যাও বাড়ছে। যদিও ইসরায়েলের প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা না করে দক্ষিণে যুদ্ধ অভিযান শুরু না করার সতর্কতা জানিয়েছে।
এই চলমান হামলার মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত মাইকেল হারজোগ এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘আগামী দিনগুলোতে’ হামাসের হাতে বন্দিরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মুক্তি পাবে বলে ইসরায়েল আশাবাদী।
প্রধানমন্ত্রীর নেতিবাচক উত্তর অন্যদিকে রাষ্ট্রদূতের আশা প্রকাশ- ইসরায়েলের এমন অবস্থায় জাতিসংঘ আবারও মানবিক বিরতির আহ্বান জানালেও সেটার সম্ভাবনা কতটুকু- সেজন্য বাড়ছে জিম্মি ও ফিলিস্তিনিদের অপেক্ষা আর বড় হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা।