মোদী সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বা ‘নিও ফ্যাসিস্ট’ বলা হবে কি না, সিপিএমের মধ্যে বিতর্ক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম

মোদী সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বা ‘নিও ফ্যাসিস্ট’ বলা হবে কি না, সিপিএমের মধ্যে বিতর্ক

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের নরেন্দ্র মোদীর সরকার ‘ফ্যাসিস্ট’ বা ‘নিও ফ্যাসিস্ট’ কি না, তা নিয়ে কেরালায় শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের প্রাক্কালে দলের পক্ষে রাজ্যে রাজ্যে রাজনৈতিক প্রস্তাবের যে খসড়া পাঠানো হয়েছে, বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়েই। খবর প্রথম আলো।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মোদী সরকারের ১১ বছরের কাজকর্মে নব্য ফ্যাসিস্ট বৈশিষ্ট্যের বিচ্ছুরণ ঘটলেও সরকারকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দেওয়া হচ্ছে না। প্রস্তাব অনুযায়ী, বিরোধীদের দমানো ও গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধে কর্তৃত্ববাদী মোদী সরকারের চাপ ও প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দুত্ববাদের প্রসারের মধ্য দিয়ে নব্য ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্যগুলোর বিচ্ছুরণ দেখা দিচ্ছে। সিপিএমের আদর্শগত মুখপত্র বলে পরিচিত চিন্তা সাপ্তাহিকে প্রস্তাবের ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, বিজেপি ও আরএসএসের কাজকর্মে নব্য ফ্যাসিবাদী লক্ষণ থাকলেও মোদী সরকারকে ফ্যাসিস্ট বা নব্য ফ্যাসিস্ট বলা হচ্ছে না। ভারত সরকারকে ওভাবে চিত্রায়িতও করা হচ্ছে না।  

রাজ্যে রাজ্যে ওই প্রস্তাব আলোচনার পর পার্টি কংগ্রেসে তা বিবেচিত হবে। তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে পার্টি কংগ্রেস চলবে এপ্রিল মাসের ২ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত। দলের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সীতারাম ইয়েচুরির সময় যে সিপিএমের চোখে বিজেপি ও আরএসএস ছিল ‘ফ্যাসিবাদী’, তার মৃত্যুর পর পলিটব্যুরোর ‘কো-অর্ডিনেটর’ প্রকাশ কারাতের প্রভাবে সেই রাজনৈতিক লাইন থেকে দল সরে আসতে চাইছে কি না, বিতর্ক শুরু হয়েছে তা নিয়েই।

সিপিএমের এই ‘বিচ্যুতি’ কেরালার বাম ফ্রন্টের শরিক সিপিআইকেও বিস্মিত করেছে। সিপিআই রাজ্য সম্পাদক বিনয় বিশ্বম বলেছেন, রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাসকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, ফ্যাসিবাদ সেটাই শেখায়। বিজেপি ঠিক সেটাই করে চলেছে। সিপিআই ও সিপিআই (এমএল) বিজেপিকে ফ্যাসিবাদী দল মনে করে। সেই লাইন থেকে সরে এসে পার্টি কংগ্রেসের আগে সিপিএম এখন ‘নব্য ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বিচ্ছুরণ’ নিয়ে কথা বলায় দুই দলই বিস্মিত।

একই রকম বিস্মিত কংগ্রেসও। জাতীয় স্তরে বিজেপির মোকাবিলায় তৈরি ইন্ডিয়া জোটের শরিক হয়েও সিপিএম হঠাৎ কেন মোদী সরকারকে ফ্যাসিবাদী না বলে সরে আসতে চাইছে, সেই চর্চা কংগ্রেসেও চলছে। ২৩তম পার্টি কংগ্রেসের গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, মোদী সরকার আরএসএসের ফ্যাসিস্ট কর্মসূচিগুলো রূপায়ণ করছে। সেই সিপিএমের এবার কেন মোদী সরকারকে ফ্যাসিবাদী বলতে অনীহা?

কেরালা বিধানসভার বিরোধী নেতা কংগ্রেসের ভি ডি সতীশন এর উত্তরে বলেছেন, সিপিএম চাইছে রাজ্য চালাতে বিজেপির সহায়তা পেতে। বহু বছর ধরেই কেরালায় বিজেপির সঙ্গে সিপিএম গোপন সম্পর্ক রেখে চলেছে।

কেরালার শীর্ষ কংগ্রেস নেতা রমেশ চেন্নিথালার ব্যাখ্যায়, রাজ্য শাখাগুলোয় পাঠানো সিপিএমের এই রাজনৈতিক প্রস্তাব ওদের রাজনৈতিক কৌশল। লক্ষ্য, ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে বিধানসভা নির্বাচনে জেতা। জিততে গেলে তাদের বিজেপির পরোক্ষ সমর্থন প্রয়োজন। ২০২১ সালেও এভাবে ওরা জিতেছিল। চেন্নিথালা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন আজ পর্যন্ত বিজেপি অথবা নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করেননি। এই রাজনৈতিক প্রস্তাব সংঘ পরিবারের কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছু নয়।

Link copied!