মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময়ই অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। ২০১৬ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে এইচ-১বি ভিসা সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
দ্বিতীয়বারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও কঠোর অভিবাসন নীতি কার্যকর করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। সব অবৈধ অভিবাসীকে দেশ থেকে বের করে দেবেন বলেও সাফ জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া কঠোরভাবে অভিবাসন দমন করে আমেরিকানদের জন্য বেশি কাজের ব্যবস্থা করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই কঠোর হুঁশিয়ারি এবার কিছুটা নরম হয়েছে। তীব্র আলোচনার মধ্যে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি সবসময় এইচ-ওয়ান বি ভিসা পছন্দ করেন এবং সবসময় এই ধরণের ভিসার পক্ষেই তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি দক্ষ কর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হলো এইচ-ওয়ান বি ভিসা। এই ভিসার জন্য নিয়োগকর্তা আবেদন করেন। আইটি, ফাইন্যান্স, আর্কিটেকচার, মেডিসিন এবং বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা এই ধরণের ভিসার যোগ্য হন।
সাধারণত তিনবছরের জন্য এইচ-ওয়ান বি ভিসা দেওয়া হয়। তবে ভিসা প্রাপ্তরা এর মেয়াদ বাড়াতে কিংবা গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারে। এই ভিসার মাধ্যমে গ্রীণ কার্ড পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের পথ সুগম হয়। তাই সারা দুনিয়াতেই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ইচ্ছুকদের কাছে এইচ-ওয়ান বি ভিসা খুবই আকর্ষণীয়।
১৯৯১ সালে শিক্ষিত দক্ষকর্মীদের জন্য এই ভিসা চালু হওয়ার পর, এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ মানুষ এইচ-ওয়ান বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ভারতীয়।
এবার এইচ-ওয়ান বি ভিসা বিতর্ক শুরু হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে নিয়ে। ট্রাম্পের জনপ্রিয় নির্বাচনী স্লোগান হলো ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন। এই শ্লোগান এবার একসঙ্গে তুলেছেন ট্রাম্প-মাস্ক। ট্রাম্পের জন্য ভোটের মাঠে টাকা ঢালা থেকে শুরু করে, গায়ে গতরেও খেটেছেন বিশ্বের এই শীর্ষ ধনী।
ট্রাম্প মাস্ক একসঙ্গে ভোটযুদ্ধে নামলেও পরিস্থিতি আচমকাই বদলাতে থাকে ভোটের পর। ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে মনোমালিন্যেও দেখা দেয়।
ইলন মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে তিনি থাকতেন এইচ-১বি ভিসায়। পরে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। মাস্কের কোম্পানি টেসলা এই ভিসার মাধ্যমেই কর্মী ভাড়া করে। ২০২৪ সালে টেসলার ৭২৪ কর্মী এইচ-ওয়ান বি ভিসায় মার্তিক যুক্তরাষ্ট্রে কাজ পেয়েছে।
কিন্তু ট্রাম্প-মাস্ক শিবিরে দ্বন্দ্বের পরিবেশ সামনে চলে আসে ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্রীরাম কৃষ্ণনের নিয়োগ ঘিরে। ট্রাম্প প্রশাসনে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত হোয়াইট হাউসের সিনিয়র নীতি উপদেষ্টা হিসেবে।
কৃষ্ণনের নিয়োগের পরই আবার সামনে আসে এইচ-ওয়ান বি ভিসা বিতর্ক। এর আগে তিনি মেধাবী অভিবাসীদের গ্রিন কার্ড দেওয়ার ব্যাপারে জোরেশোরে কথা বলেছিলেন। যা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে যায়। আর এই বিতর্কের কেন্দ্রেই ছিলো এইচ-ওয়ান বি ভিসা।
ইলন মাস্ক এই বিতর্কে এইচ-ওয়ান বি ভিসার পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি ট্রামক্পকে বলেন, ‘‘যদি আপনি চান, আপনার টিম চ্যাম্পিয়ন হোক, তাহলে সেরা প্রতিভাদের নিয়োগ করতেই হবে।’
এই ধরনের মতামত ট্রাম্পের মনোভাবের একেবারেই বিপরীত। ফলে এই নিয়ে ক্রমেই ফাটল ধরে দুই শিবিরে। সেই পরিস্থিতির মধ্যে সুর নরম করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, আমার সম্পত্তিতে অনেক এইচ-১বি ভিসা আছে। আমি এইচ-১বি ভিসায় বিশ্বাস করি। অনেকবারই আমি এটি কাজে লাগিয়েছি। এটি একটি খুব ভালো কর্মসূচি।