জানুয়ারি ৩, ২০২৩, ০৫:৪৮ পিএম
ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে দেশটির উগ্র ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়কমন্ত্রী ইতামার বেন-গ্যাভির প্রবেশ করার ঘটনায় নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইসরায়েলের মন্ত্রীর এ ধরণের কর্মকাণ্ডকে ‘নজিরবিহীন উসকানি’ বলে মনে করছেন ফিলিস্তিনিরা। এমতাবস্থায় ফিলিস্তিনিদের মাঝে আবারও উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করেন
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) প্রকাশিত কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার ইসরায়েলি মন্ত্রীকে আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে পরিদর্শন করতে দেখা যায়। এবিষয়ে বেন-গ্যাভির মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের সরকার হামাসের হুমকির কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।’
তবে এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ বলেন, “বেন-গ্যাভিরের এমন সফর নতুন করে সহিংসতার জন্ম দেবে।”
আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসেরায়েলি মন্ত্রীর প্রবেশের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এটিকে ‘নজিরবিহীন উসকানি’ এবং সংঘাতের জন্য ‘বিপজ্জনকভাবে বাড়াবাড়ি’ দেখছে।
অন্যদিকে, বেন গ্যাভিনের আল আকসা মসজিদে প্রবেশের আগে হামাস কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছিল, তারা বেন গ্যাভিনের পরিকল্পিত সফরের যেকোনো পরিণতির জন্য জন্য ইসরায়েল সরকারকে দায়ি করবে।”
মুসলমানদের কাছে মক্কা ও মদিনার পর সবচেয়ে পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদ।জেরুজালেমে অবস্থিত এই মসজিদে শুধুমাত্র মুসলমানরাই নামাজ বা প্রার্থণা করে থাকেন। তবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের উগ্র ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গ্যাভির এই ব্যবস্থার পরিবর্তন চান। মুসলমানদের পাশাপাশি ইহুদিরাও প্রার্থণা করুক-এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি। তবে তার এই চাওয়াকে কেন্দ্র করে ইহুদি সম্প্রদায় ও মুসলমানদের নেতাদের পক্ষ থেকে বাধা ও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছেন বেন-গ্যাভি।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ মনে করে, আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে বেন গ্যাভির প্রবেশের ঘটনায় এখানকার পরিস্থিতি আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। তার কর্মকাণ্ড স্থিতাবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। কারণ তারা মনে করছে, উগ্র ডানপন্থী ইসরায়েলিরা অনেক দিন ধরেই আল-আকসা মসজিদের অবশিষ্টাংশে একটি সিনাগগ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে।
এদিকে, ইসেরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, বেন গ্যাভির আল আকসা যাওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আলোচনা করেছিলেন। নেতানিয়াহুর সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই বেন গ্যাভি আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারন আল আকসা মসজিদে প্রবেশ করেছিলেন। তার এই প্রবেশের ঘটনায় দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার (বিদ্রোহ) জন্ম দেয়।
এদিকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) মতামত নেওয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিকে ‘ঘৃণ্য’ কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মানতে ইসরায়েল বাধ্য নয়। তিনি বলেছেন, “ইহুদি জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব জমিতে কিংবা আমাদের চিরন্তন রাজধানী জেরুজালেমে কোনও দখলদার নয়।” জাতিসংঘের কোনও প্রস্তাব এই ঐতিহাসিক সত্যকে বিকৃত করতে পারে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।