জুলাই ৯, ২০২৩, ০৩:২৪ পিএম
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনকে বিতর্কিত ও গণবিধ্বংসী ক্লাস্টার বা গুচ্ছ বোমা দেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে মিত্র দেশগুলো। কানাডা, যুক্তরাজ্য, স্পেনসহ বেশ কয়েকটি মিত্র দেশ বাইডেন প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে ভালচোখে দেখছে না। বেশ অস্বস্তি প্রকাশ করে এসব দেশ বলছে, তারা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের বিরোধী।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, ক্লাস্টার অস্ত্র উৎপাদন ও নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ১২৩টি দেশের একটি হচ্ছে যুক্তরাজ্য। আমরা কখনোই এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের পক্ষে নই।
স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রোবেলস বলেছেন, ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা না পাঠানোর ব্যপারে তার দেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
শিশুদের ওপর এ ধরণের বোমার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশি দেশ কানাডা। দেশটির সরকার বলছে, কখনো কখনো বহু বছর এই বোমাগুলো অবিস্ফোরিত থেকে যায়। ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্রের কনভেনশন সম্পুর্ণ মেনে চলে বলেও জানিয়েছ দেশটির সরকার।
এদিকে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সহায়তাকারী দেশ জার্মানি এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কখনোই ইউক্রেনকে এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করবে না।
ক্লাস্টার বোমা কী?
এই বোমার বিশেষত্ব হলো- এতে একাধিক বিস্ফোরক বোম্বলেট থাকে। বছরের পর বছর এ বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে এবং যুদ্ধ শেষ হলেও পরে যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই সমরবিদরা এই বোমাটিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বা বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচনা করেন। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, স্পেনসহ বিশ্বের ১২৩ দেশ ক্লাস্টার বোমা নিষিদ্ধ করেছে।
প্রসঙ্গত, রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে গোলাবারুদ শেষ হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ক্লাস্টার বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র চেয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাতে তিনি দেশটিতে ক্লাস্টার বোমা সরবরাহ করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা সরবরাহের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ‘ইউক্রেনিয়দের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়ার’ আগেই তিনি ওই সিদ্ধান্ত নেন।
বেসামরিক মানুষ হতাহতের ভয়ঙ্কর রেকর্ড রয়েছে ক্লাস্টার বোমার। বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশ এই বোমাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত এক রুশ রাষ্ট্রদূত এ ঘটনায় ওয়াশিংটনের চরম নিন্দা করেছেন বলে বিবিসি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয় সময় শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে সিএনএনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আগামী সপ্তাহে লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ার আগেই ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি মিত্রদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এদিকে, অবিস্ফোরিত বোমার কারণে সাধারণ মানুষের প্রাণহানীর ভাবনা থেকেই ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা সরবরাহের বিষয়টি দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, যুদ্ধে রাশিয়াও ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করছে। ইউক্রেনকে যে ক্লাস্টার বোমা দেওয়া হচ্ছে তা সেগুলোর চেয়ে বেশি নিরাপদ বলেও তিনি জানান।