ইউরোপ যাত্রা: তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরের উপকূলে ১০ দিনে ২১০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ০৮:০১ পিএম

ইউরোপ যাত্রা: তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরের উপকূলে ১০ দিনে ২১০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু

ভূমধ্যসাগর  পাড়ি দিয়ে ইউরোপ  যাওয়ার সময় তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগর উপকূলে নৌকাডুবিতে গত ১০ দিনে অন্তত ২১০ অভিবাসনপ্রত্যাশী নিহত হয়েছেন।  বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার আলজাজিরার প্রতিবেদেনে বলা হয়, তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অধিকাংশ সাব-সাহারান আফ্রিকা, সিরিয়া ও সুদানের অধিবাসী বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, ইউরোপ যাওয়ার অন্যতম লিবিয়ার বেনগাজি রুটে দেশটি অভিযান জোরদার করায় গত কয়েকমাস ধরে তিউনিসিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে।

গতকাল তিউনিসিয়ার বন্দরনগরী স্ফাক্সের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ফাউজি মাসমৌদি গণমাধ্যমকে বলেন, 'গত মঙ্গলবার আমাদের হাতে দুই শতাধিক মরদেহ ছিল যা হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। এতে  স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট আকার  ধারণ করেছে  বলেও তিনি জানান।

স্ফাক্সের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা আরও জানান, 'অনেক মরদেহ  উপকূলে আনা হলেও  মৃতদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। মরদেহের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিউনিসিয়া ফোরাম ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রাইটসের (এফটিডিইএস) রমধানি বেন আমর গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৪ এপ্রিল অন্তত ২২০ অভিবাসনপ্রত্যাশী ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মারা গেছেন বা নিখোঁজ আছেন। তাদের অধিকাংশ সাব-সাহারান এলাকার মুসলিম দেশগুলো থেকে এসেছিলেন।

কেন ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপ?

ইউরোপকে অনেকে স্বপ্নের সোনার হরিণ বলে অনেকে মনে করে থাকেন। তাদের ধারনা দেশটিতে গেলে জীবনের ধরণই পাল্টে যাবে, হাতে আসবে কাড়ি কাড়ি টাকা, সমাজে বাড়বে প্রভাব প্রতিপত্তি। আর তাই উন্নত জীবন আর বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের লোকজন ইউরোপে যাচ্ছেন। এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশিরভাগেরই গন্তব্য ইতালি। চলতি বছর দেশটিতে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে।

ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালি হচ্ছে ইউরোপের অন্যতম প্রবেশ দ্বার। তিউনিসিয়ার উপকূল থেকে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপ মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরে। ফলে এই পথ মানবপাচারের জন্য বহুল ব্যবহৃত। এছাড়া লিবিয়া থেকে ইতালির উপকূলে পাড়ি জমানোর পথটি মানব পাচারের জন্য জনপ্রিয়।

অবৈধভাবে ইতালি বা ইউরোপে যাওয়ার অন্যতম পথ হচ্ছে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করা। ইতালি প্রবেশের অন্যতম রুট বা সুবিধাজনক জায়গা হচ্ছে আফ্রিকার দেশ লিবিয়া ও তিউনিশিয়া। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে দারিদ্র্যের কারণে লিবিয়া হয়ে হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছেন। 

বাংলাদেশ,ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়া,আফ্রিকা ও মধ্যপা্চ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা উন্নত জীবন গড়া ও ভাগ্যের  চাকা বদলানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নানা উপায়ে লিবিয়া পৌঁছে। তারপর দেশটির  জুয়ারা উপকূল  থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনেকে ইতালি পৌঁছে থাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে অনেকের মৃত্যু ঘটে।

Link copied!