ওয়াগনারের সাথে পুতিনের দ্বন্দ্ব নিয়ে আনন্দে জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুন ২৫, ২০২৩, ০২:১১ এএম

ওয়াগনারের সাথে পুতিনের দ্বন্দ্ব নিয়ে আনন্দে জেলেনস্কি

সংগৃহীত ছবি

রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সাথে প্রেসিডেন্ট পুতিনের দ্বন্দ্ব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক লম্বা পোস্ট করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, রাশিয়ার দুর্বলতা অনস্বীকার্য। এতে কোনো সন্দেহ নেই। মস্কো ইউক্রেনে তার সেনা ও ভাড়াটে সেনাদের যত দীর্ঘসময়ের জন্য রাখবে, দেশের ভেতরে বিশৃঙ্খলা তত বেশি হবে।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এই অভিযানে ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপকে সাথে নেয় রুশ বাহিনী। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুতে লড়াই করে ওয়াগনাররা। বাখমুত জয় করে এ মাসের শুরুতে ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন রুশ বাহিনীর কাছে বুঝিয়ে দেন।

শুক্রবার (২৩ জুন) অনেকটা আকস্মিকভাবেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন প্রিগোজিন। একাধিক টেলিগ্রাম বার্তায় ৬২ বছর বয়সী প্রিগোজিন বলেন, তার যোদ্ধারা রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছে। তবে এটাকে তিনি অভ্যুত্থান বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের হুমকি দিয়ে ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেছেন, তাদের সামনে যত বাঁধাই আসুক তা ধ্বংস করে দেয়া হবে। বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার (২৩ জুন) প্রিগোজিনের নেতৃত্বে প্রায় ২৫ হাজার ওয়াগনার সেনা রাশিয়ায় ঢুকে পড়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘পিঠে ছুরি মারা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি যেকোনো মূল্যে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে রাশিয়ার পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। শুক্রবার (২৩ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাডাম হজ বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই বিষয় অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং মিত্র ও অংশীদারদের সাথে এই অগ্রগতির  বিষয়ে পরামর্শ করব।’

ইইউয়ের পররাষ্ট্র বিষয়ক ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক মুখপাত্র নাবিলা মাসরালি বলেছেন, আমরা সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি ও মস্কোতে আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্থায়ী যোগাযোগ করছি। আমাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও অভ্যন্তরীণ পরামর্শ অব্যাহত রাখছি। বিষয়টি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ সমস্যা।

এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, রোস্তভ-অন-দনের পর রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দ্বিতীয় আরেকটি শহরের সামরিক সব স্থাপনা ওয়াগনার যোদ্ধারা দখলে নিয়েছেন। শনিবার রোস্তভ-অন-দন ও রাজধানী মস্কোর মধ্যবর্তী ভোরোনেজ শহরের সব সামরিক স্থাপনা ওয়াগনার দখলে নিয়েছে।

তবে ভোরোনেজ শহর কর্তৃপক্ষ ওয়াগনারের সৈন্যদের দখলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। ভোরোনেজ অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার গুসেভ ওই অঞ্চলে সাঁজোয়া যানের বহরের চলাচলের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয়দের সতর্ক করে দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ভোরোনেজ অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী ও যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু করেছে।

ওয়াগনারের বিদ্রোহের ঘোষণা দেওয়ায় দেশজুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাশিয়া। ইতিমধ্যে মস্কো, ভোরোনেজ ও সেন্ট পিটার্সবার্গে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী।

দেশটির বিভিন্ন শহরের রাস্তায় চলাচলকারী লোকজনের নথিপত্র যাচাই-বাছাই, জনশৃঙ্খলা জোরদার, টেলিফোন কথোপকথনে নজরদারি এবং যোগাযোগ সীমিত করে ফেলা হয়েছে।

Link copied!