কেন ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হলো টাইটান?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুন ২৪, ২০২৩, ০৫:০৮ এএম

কেন ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হলো টাইটান?

টাইটানের হতভাগ্য অভিযাত্রীরা। ছবি: সংগৃহীত

টাইটান সাবমেরিনের পাঁচ অভিযাত্রীর করুণ পরিণতি হওয়ার পর এ নিয়ে নানা মহলে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখার অভিযাত্রায় শতবর্ষ পর আরও এক বিয়োগ-গাঁথা রচিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা একেবারেই অসম্ভব। তারা এখন টাইটানের ধংসাবশেষ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। কোন সময়ে এবং ঠিক কী কারণে মহাসাগরের তলদেশে ভয়াবহ অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে সাবমেরিনটি ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে সেটিও জানার চেষ্টা করছেন।

বৃহস্পতিবারই আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয় টাইটান আর অক্ষত নেই। বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই পাঁচ অভিযাত্রীরও। উদ্ধারকারীদের ওই ঘোষণা আসার আগে চার দিন মহাসাগরের তলদেশে চিরুনি তল্লাশি চালানো হয়। লক্ষ্য ছিল সাবমেরিনটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা আরোহীদের জীবিত উদ্ধার করা। ওই তল্লাশি অভিযানের দিকে নজর ছিল সারা বিশ্বের। 

প্রসঙ্গত, গত রবিবার আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল ২২ ফুট দৈর্ঘ্যের সাবমেরিন টাইটান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তলদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সাথে সাবমেরিনটির যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ধারনা করা হচ্ছে, তখনই সেটি প্রচণ্ড চাপে বিস্ফোরিত হয়েছে। ওই বিস্ফোরণ ঘটতে ন্যানো সেকেন্ডও লাগেনি! কারণ, আটলান্টিকের তলদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে শতগুণ বেশি চাপ বেশি। ওই চাপের কারণেই টাইটানের ওই পরিণতি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মার্কিন নৌবাহিনী বলছে, টাইটান যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই মহাসাগরের তলদেশে ভয়াবহ অন্তর্মুখী বিস্ফোরণের মুখে পড়ে। এতে সাবমেরিনটি ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায়। ওই বিস্ফোরণের ঘটনার সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দও তারা শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। ওই তথ্য তখন তারা অনুসন্ধানকারীদেরও জানিয়ে দিয়েছিলেন।

শুক্রবার অনুসন্ধানকারী দল আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের আশপাশে টাইটানের কিছু ধ্বংসাবশেষও পান। এ অবস্থায় অনুসন্ধানকারীরা টাইটানের আরও ধ্বংসাবশেষের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ঠিক কখন ঘটনাটি ঘটল, ঠিক কী হয়েছিল, আর কেনইবা হয়েছিল—এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর তারা জানার চেষ্টা করছেন।

ভয়াবহ অন্তর্মুখী বিস্ফোরণ কী

গভীর সমুদ্রের তলদেশে অন্তর্মুখী বিস্ফোরণ বলতে বোঝায়, কোনো নৌযান সমুদ্রের তলদেশের দিকে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড চাপে যখন হঠাৎ করে ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায়। ওই দুর্ঘটনার সময় টাইটানের অবস্থান ঠিক কোথায় ছিল, সমুদ্রের কতটা গভীরে ছিল— তা এখনও স্পষ্ট নয়।

শতবর্ষ আগে ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩ হাজার ফুট গভীরে রয়েছে। আর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তলদেশের উদ্দেশে যাত্রার ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মাথায় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সাথে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয় টাইটানের।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব কেভ ডাইভারসের আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ পরিচালক রিক মুরকার বলছেন, টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ যেখানে আছে, সেখানে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ পাউন্ড অভ্যন্তরীণ চাপ রয়েছে। ভূপৃষ্ঠে মানুষ যে চাপ অনুভব করে, এই চাপ তার চেয়েও কয়েক শত গুণ বেশি।

ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সাবেক নৌ কর্মকর্তা এইলিন মারিয়া মার্টি বলেন, ভয়াবহ অন্তর্মুখী বিস্ফোরণগুলো অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ঘটে থাকে। এক মিলিসেকেন্ডের একটি ভগ্নাংশের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় পতিত সাবমেরিনের অভ্যন্তরে থাকা ব্যক্তিরা কোনো কিছু বুঝতে পারার আগেই পুরো সেই সাবমেরিন ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায়। ফলে এই ঘটনায় যারা মারা গেছেন, তাঁদের লাশ উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা কম।

যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড গতকাল বলেছে, এখন তারা যা করতে পারে, তা হলো অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া। তবে তারা সতর্ক করে বলেছে, সমুদ্রের তলদেশের এই জায়গার পরিবেশ অবিশ্বাস্য রকমের প্রতিকূল।

মরদেহের খোঁজে 

এ অবস্থায় অনুসন্ধানকারীরা সাবমেরিনটির আরোহীদের মরদেহের খোঁজ করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তাঁরা ঘটনাটি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার আশায় সমুদ্রের তলদেশে অনুসন্ধান-তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। 
টাইটানে যারা ছিলেন

টাইটানের ক্যাপসুলে ছিলেন পাঁচ পর্যটক, যার মধ্যে ওশেনগেটের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ (৬১) ছিলেন চালক হিসেবে। এছাড়া আরও ছিলেন ব্রিটিশ ধনকুবের, বিমান সংস্থা অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং (৫৮), পাকিস্তানের এংরো করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯), ফরাসি পর্যটক পল অঁরি নারজিলে (৭৭)।

 সূত্র: বিবিসি ও সিএনএন

Link copied!