ছবি: সংগৃহীত
জুলাই গণঅভুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত হয়েছে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
রোববার, ২৭ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে “দ্যা লিগ্যাসি অব জুলাই রেভ্যুলেশন ২০২৪; রিবিল্ডিং বাংলাদেশ” শীর্ষক এই সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে অংশ নিয়েছে দেশ ও বিদেশের মোট ১৫টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সোসাইটি সংগঠন।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রস্তাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, একাডেমিক ও গবেষণাপত্র উপস্থাপন ও বিশ্লেষণমূলক আলোচনা এবং বাংলাদেশ ২.০ গঠনের দিকনির্দেশনা তৈরি করাই এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য বলে জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর আসিফ নজরুল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর চৌধুরী রফিকুল আবহান, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত প্রসেসর লূৎফে সিদ্ধিকীসহ আরো অনেকে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “আমরা আজ যে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের পতন দেখেছি, সেটার নিষ্ঠুরতা আমাদের বিবেককে সামগ্রিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে। এই শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করেছিল। শুধু তাই নয় র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সন্ত্রাসের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল। গুম-খুন হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কবি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ছাত্রনেতাদেরকে ‘অপরাধী’ হিসেবে জেলে ভরা হয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুক্ত চিন্তায় বাঁধা দেওয়া হতো।”
জুলাই বিপ্লবের প্রথম আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনকে শুধু আলোচনা নয়, বরং একটি ‘সাক্ষ্য প্রমাণের’ প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা বিকৃত ইতিহাস থেকে সত্যকে উদ্ধার করতে চাই। যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের পরিবারদের কান্না, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে গেঁথে থাকা গুলির চিহ্ন—এসবই একদিন ন্যায়বিচারের নির্মাণকাজে প্রমাণ হয়ে উঠবে।
“বর্তমান বাংলাদেশ সংকটাপন্ন উত্তরণের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতনই ন্যায়বিচারের গ্যারান্টি নয়। এক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের বিচারব্যবস্থাকে ভয়মুক্ত করতে হবে, নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কারসহ ছাত্র আন্দোলনকে যেকোনো দখলদারিত্ব থেকে রক্ষা করতে হবে।”
আদিলুর রহমান তার বক্তব্যে জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্মরণ করে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবারও সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। এর শ্রেণীকক্ষগুলো হয়ে উঠেছিল রণকৌশলের কেন্দ্র, ছাত্ররা হয়েছিল বিবেকের যোদ্ধা। আমরা বিদেশি গবেষক, অধ্যাপক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ, যারা বিপদজনক সময়েও বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।”
এই সম্মেলনকে একটি ‘জাতীয় অঙ্গীকারে’ পরিণত করতে জুলাই বিপ্লবের দলিলপত্র, ভিডিও, ফটো নিয়ে একটি আর্কাইভ গড়ে তোলা, স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে জুলাই ইতিহাস সত্যনিষ্ঠভাবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, “শেখ হাসিনা ইসলামোফোবিয়াকে ব্যবহার করে ভারতের নির্দেশে মুসলিম নিধন করেছে। ভারতের বিদেশনীতির একটি গর্বিত উদাহরণ ছিল বাংলাদেশ। আমি অনেক আগেই বলেছিলাম বাংলাদেশের উপর ভারতের কর্তৃত্ব দীর্ঘস্থায়ী নয়। আর জুলাই আন্দোলনের শহীদেরা আমাকে ভুল প্রমাণ হতে দেয়নি।”
সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৪০০টি প্রবন্ধ জমা পড়ে। এরমধ্যে ৬০টি প্রবন্ধ মৌখিক উপস্থাপনের জন্য ৬০টি পোস্টারকে মনোনীত করা হয়েছে।
সম্মেলন শেষে টিএসসি অডিটোরিয়ামে “লাল জুলাই” নামক একটি মঞ্চনাটক উপস্থাপন করা হবে।
ঢাকাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড থট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ-এর যৌথ আয়োজনে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সহ-আয়োজক হিসেবে অংশ নিয়েছে: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, কানাডার ইউনিভার্সিটি অব রেজিনা, সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্সেস, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্ট্যাডিজ, দা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল এন্ড ডিপ্লোমেসি যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ, যুক্তরাজ্যের জাগরণ ফাউন্ডেশনসহ আরো অনেক সংস্থা।