জুলাই ২৬, ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, “যখন রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা হারানোর ভয় থাকে, তখন তারা কিছুটা হলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকে। কিন্তু যখন সেই ভয়টুকুও থাকে না, তখন তারা দানবে পরিণত হয়।”
শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে মানবাধিকার সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) আয়োজিত ১১তম মানবাধিকার সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয় রাষ্ট্রের তিনটি স্তর— নির্বাহী, আইনপ্রণেতা ও বিচার বিভাগের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান না করলে। “আমরা যদি শেকড়ে না যাই, মানবাধিকার রক্ষা করা সম্ভব নয়,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়টি তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর ছিল। শেখ হাসিনার শাসনামলেও ২০১৩ সাল পর্যন্ত মেয়র নির্বাচনে বিরোধীরা জয়ী হয়েছে। সেই স্বচ্ছতা এখন আর নেই।”
তিনি আরও বলেন, “অনেকে বলেন, নির্বাচনই সব কিছু নয়। কিন্তু ১৯৯১ থেকে ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত সময়টা দেখুন—ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের কারণে দলগুলো জনগণের জবাবদিহিতার মধ্যে ছিল। কারণ তারা জানত, হারার সম্ভাবনা আছে।”
বর্তমান সরকারের শাসনামলে সহিংসতার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, “গত কয়েক বছরে বিরোধী আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়েছে, অনেকেই পঙ্গু হয়েছে। এটা হচ্ছে লাগামহীন ক্ষমতার ভয়াবহ মূল্য।”
তবে আশাবাদের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী থাকতে পারি, তবে সেই আশাবাদ হতে হবে বাস্তবতার ভিত্তিতে। আগামী কয়েকটি মেয়াদে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন, যথাযথ আইনগত ও প্রশাসনিক সংস্কার, এবং মানবাধিকার সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়—তবেই পরিবর্তন সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী ও HRSS প্রধান উপদেষ্টা মো. নূর খান, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. একরামুল হক, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, এবং শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও সভায় কথা বলেন।
নূর খান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের এক বছর হয়ে যাচ্ছে। আমরা যেন অতীতের ফ্যাসিবাদী নির্যাতনের পুনরাবৃত্তি না করি। এখনই রুখে না দাঁড়ালে পুরো গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।”
সারা হোসেন বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণহীন আচরণের উৎস খুঁজে বের করাই এখন প্রধান দায়িত্ব। শুধু ক্ষতিপূরণ দিলেই হবে না—ভুক্তভোগীদের জীবন পুনর্গঠনে সহায়তা করতে হবে।”