গণভোটের চেয়ে আলুর ন্যায্যমূল্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ১০:০৪ এএম

গণভোটের চেয়ে আলুর ন্যায্যমূল্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এই সময়ে গণভোটের চেয়ে আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া এবং পেঁয়াজের সংরক্ষণাগার স্থাপন কৃষকদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এ সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান।

উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যয়ের অর্ধেক দামেও চাষিরা আলু বিক্রি করতে পারছেন না বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আলু চাষ করে আলুচাষিরা এবার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন। অপরদিকে আমরা দেখি দু-একটি রাজনৈতিক দলের আবদার মেটাতে গিয়ে কথিত গণভোট যদি করতে হয়, রাষ্ট্রকে প্রায় সমপরিমাণ টাকা গচ্চা দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানের মুখোমুখি এসব আলুচাষির কাছে এই সময়ে গণভোটের চেয়ে মনে হয় আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়াটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

তাঁর এই বক্তব্য দেশবাসীর কাছে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের সহায়তা প্রত্যাশা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

এ প্রসঙ্গে আলোচনায় দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর পেঁয়াজ আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয় বলেও উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কথিত গণভোট উৎপাদনের চেয়ে সেই টাকায় পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার বা কোল্ডস্টোরেজ যদি স্থাপন করা হয়, তবে সেটি কৃষকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।’

গণভোটের দাবিতে আন্দোলনের আড়ালে পতিত শক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

গণভোটের সময়সহ সংস্কার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিপরীতমুখী অবস্থানের প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আজকে যারা আমরা রাজপথের সঙ্গীরা বসে আছি, কেউ হয়তো রাজপথের সঙ্গী ছিল, সে রকম কিছু দলকে আমরা দেখছি বর্তমানে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ একদিকে নির্বাচন না করে হয়তো রাষ্ট্রের খবরদারির সুযোগ গ্রহণ করা, অপর দিকে রাজনৈতিকভাবে যদি বলতে হয়—পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথকে সুগম করে দেওয়া।’

বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচার একইভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা সেই দলের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে কি না, মনে হয় এটি আমাদের সবার দেখার বা ভাবার সময় এসেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের অগ্রাধিকার ঠিক করার পরামর্শ দিয়ে তারেক রহমান বলেন, স্বল্প মেয়াদে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণ সার্বিক সফলতা আশা করে না। দেশে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করেছে। এখন সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি একটি রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে, নাকি দেশের গণতান্ত্রিক জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেবে।

ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান

ফ্যাসিবাদের ফিরে আসা ঠেকাতে আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীরা গত কয়েক দিনে খোদ রাজধানীতে যেভাবে আগুন-সন্ত্রাস চালিয়েছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির করণীয় সম্পর্কে এটা একটা সতর্কবার্তা হতে পারে বলে আমার কাছে মনে হয়।’

কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখনই সবার কাছে স্পষ্ট, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে একটা দল ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে গিয়ে, যেটি তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অনেক সময় বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছে যে নিজেদের বাঁচাতে গিয়ে তারা ফ্যাসিবাদের ছাতার নিচে আশ্রয় নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছিল। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচার একইভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা সেই দলের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে কি না, মনে হয় এটি আমাদের সবার দেখার বা ভাবার সময় এসেছে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!