কোভিড টিকা: মোদির জন্যই বিপদে বিশ্ববাসী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১, ২০২১, ১২:৪৪ পিএম

কোভিড টিকা: মোদির জন্যই বিপদে বিশ্ববাসী

করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকবিলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট কোম্পানির ‍উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্রয় করেনি ভারত সরকার। বরং দেশের বিপর্যন্ত অবস্থা কাটাতে অন্যদেশে রপ্তানি হওয়ার জন্য তৈরি টিকা নিজের দেশে প্রয়োগ করছে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তে টিকা না পাওয়ায় বেশ বিপদের মুখে পড়েছে বিশ্বের অনেক দেশ। সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনের এক  নিবন্ধে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

ভারতীয় সাংবাদিক দেবাশিষ রায় চৌধুরীর ওই নিবন্ধে বলা হয়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি করার ক্ষেত্রে সরকারের মাধ্যমে চুক্তি করে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। চুক্তি মোতাবেক বেশ কয়েকটি দেশে করোনার টিকা ধাপে ধাপে পাঠাতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকবিলায় ভারত যখন বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই নরেন্দ্র মোদি সরকার টিকা রপ্তিানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এতে চুক্তি হওয়া বিভিন্ন দেশ বেশ বিপদে পড়ে যায়।

ভারতের করোনা পরিস্থিতি প্রায় দুই মাস ধরে খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। দেশটিতে এপর্যন্ত ৩ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেড়মাস আগে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে তিন হাজারের বেশি মরদেহ যোগ হলেও বর্তমানে একটু কমেছে। মঙ্গলবারও দেশটিতে ৩ হাজার ১২৮ জন মারা গেছেন। অন্যেদিকে, দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে মঙ্গলবার (১ জুন) পর্যন্ত  শনাক্ত হয়েছেন ২ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪ জন।

করোনা সংক্রমণের এই ভয়াবহ অবস্থা মোকাবিলায় মোদি সরকার বিভিন্ন দেশে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। আর ওইসব টিকা নিজ দেশের জনগণের ওপর প্রয়োগ শুরু করে।

যার ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে ভারতের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা  মনে করছেন-এমনই খবর গতকাল সোমবার (৩১ মে) প্রকাশিত হয়  দেশটির আনন্দবাজার ও হিন্দুস্তান টাইমস গণমাধ্যেমে।

টাইম ম্যাগাজিনের নিবন্ধে বলা হয়, করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় গত বছরে ভারত সরকার টিকা বিতরণের পরিকল্পনা জানালেও ওই সময় পর্যন্ত মোদি সরকার সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছে টিকার অর্ডার দেয়নি।

গত বছরের আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, তার সরকার টিকা বিতরণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। গত জানুয়ারি মাসের শেষের  দিকে সেরাম ইনস্টিটিউটকে প্রথমবারের মতো টিকার জন্য অর্ডার দেন। যার ফলে ওই অর্ডারের টিকায় গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশটির শূন্য দশমিক ৫ ভাগ জনগণকে পুরোপুরি টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই হার বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ১ ভাগ।

সেরাম ইনস্টিটিউট চলতি বছরে ২ বিলিয়ন টিকা বিভিন্ন সরবরাহের  প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তবে গত মার্চে হঠাৎ করেই সরবরাহ বন্ধ করে সেরাম ইনস্টিটিউট জানায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে টিকা সাপ্লাই করতে পারবে না। সেরাম প্রতিষ্ঠানের এই ঘোষণায় বিভিন্ন দেশ  প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক  অঙ্গনে সমালোচনার  ঝড়ে টিকতে না পেরে কোম্পানির মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনাওয়ালা ভারত থেকে লন্ডনে  পালিয়ে যান।

নিবন্ধে বলা হয়, সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা না দেওয়ায় অন্যান্য দেশের মতো ভারতের প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।

 

Link copied!