চীনে বিয়ের ব্যাপারে যেকারণে আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণ -তরুণীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুলাই ৫, ২০২৩, ০৮:৫২ পিএম

চীনে বিয়ের ব্যাপারে যেকারণে আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণ -তরুণীরা

সংগৃহীত ছবি

চীনের জনসংখ্যা প্রতিবছরই কমছে। তাই জনসংখ্যা বাড়াতে বিয়ে করলে সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রতি দিচ্ছে দেশটির সরকার। তারপরও জনসংখ্যা বাড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে শি জিনপিং সরকার। কারণ তরুণ প্রজন্মের নারী-পুরুষেরা বিয়েতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বেকারত্ব ও আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে বিয়েতে একরকম ‘ভয়’ পাচ্ছেন তারা।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা তরুণ-তরুণীদের অনেকেই দ্রুত সম্ভব বিয়ের পক্ষে নয়। দেশটির উত্তরের প্রদেশ সাংসির বাসিন্দা জিনহি হু। বয়স ২৯ বছর পেরিয়ে গেলেও বিয়ের পিঁড়িঁতে বসার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না এই স্কুলশিক্ষক।

বিয়ের ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ খেকে চাপ দিলেও তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না। তার বাবা-মা গত তিন বছরে অন্তত ২০টি ‘ব্লাইন্ড ডেটে’ পাঠিয়েছেন। এরপরও জিনহির জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তিনি বিয়ে করার আগ্রহ পাচ্ছেন না।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘বিয়ে করা, না করা স্বাধীনতার বিষয়। সবার যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে করার প্রয়োজন নেই’।

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শতকের নব্বইয়ের দশকে এবং চলতি শতকের প্রথম দশকে জন্ম নেওয়া নারীদের মধ্যে বিয়ে করার আগ্রহ বেশ কম। চীনের সবশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিয়ের গড় বয়স ছিল প্রায় ২৯ বছর যা ২০১০ সালের তুলনায় চার বছর বেশি।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য মতে, চীনে সন্তান জন্মদেয়ার হার ১৯৮০র দশকে ২.৬ শতাংশ ছিল, ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১.১৫ শতাংশ৷ গত প্রায় ছয় দশকের মধ্যে গতবছর থেকে জনসংখ্যা কমতে শুরু করেছে দেশটিতে৷ এই হিসেব থেকে অবশ্য ২০০৩ সালকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ ওই বছর ভয়াবহ এক মহামারীতে দেশটিতে জন্মহারের চেয়ে মৃত্যুহার বেড়ে গিয়েছিল।

দেশটিতে গত ৩৭ বছরের মধ্যে নতুন বিয়ের সংখ্যা সর্বনিম্ন। এটি চীনের চীনের সিভিল এফেয়ার্সবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশটিতে মাত্র ৬৮ লাখ ৩০ হাজার দম্পতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

চীনা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিয়ের প্রবনতা কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ইয়ে ল্যু’র অভিমত হচ্ছে,চীনে কর্মক্ষেত্রে এখনো লিঙ্গ বৈষম্য ব্যাপকভাবে রয়ে গেছে। একজন নারীকে নিয়োগের ক্ষেত্রে তার সন্তানসম্ভবা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এবং মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রয়োজন পড়বে কিনা সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। আর এ কারণে চীনের তরুণ প্রজন্মের পুরুষ ও নারীরা ক্যারিয়ার এবং পারিবারিক জীবনের মধ্য থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

ইয়ে বলেন, ‘যখন নারীরা শিক্ষার পেছনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা বিয়ে এবং মাতৃত্বে প্রবেশের জন্য একটি বেশি বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করেন’

লন্ডনের কিংস কলেজের এই অধ্যাপক আরও বলেন, “যখন নারীরা শিক্ষার পেছনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা বিয়ে এবং মাতৃত্বে প্রবেশের জন্য একটি বেশি বয়স অবধি অপেক্ষা করেন৷”

Link copied!