জেনেভায় পুতিন-বাইডেন বৈঠকের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুন ১৬, ২০২১, ০৫:১০ পিএম

জেনেভায় পুতিন-বাইডেন বৈঠকের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব

জেনেভায় বৈঠকে বসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবারের (১৬ জুন) এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব। এই বৈঠককে অনেকেই তুলনা করছেন স্নায়ু যুদ্ধকালে ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এবং সোভিয়েত নেতা মিখাইল গরবাচভের বৈঠকের সঙ্গে।

অবশ্য রিগ্যান ও গরবাচভের সেই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত তাদের মধ্যকার দূরত্ব ঘোচাতে আয়োজন করেছিলো এবং সেই বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক কিছু উষ্ণ হয়। কিন্তু পুতিন-বাইডেন বৈঠকে তেমনটি আশা করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। উল্টো এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যকার বিভেদকে আরও স্পষ্ট করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুতিনের শাসনামলে রাশিয়ার সম্পর্ক সবচাইতে খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয় ২০১৪ সালে যখন রাশিয়া সেনা পাঠিয়ে ইউক্রেইনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখলে নেয়। এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানোর পাশাপাশি বিষয়টি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। জি৭ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে বাইডেন জানান, তাদের আলোচনায় এই ক্রিমিয়া ইস্যুটি গুরুত্বপাবে।

এর পাশাপাশি গুরুত্বপাবে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এবং মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাশিয়ান হ্যাকারদের সাইবার হামলার বিষয়গুলো, যার কোনটিই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নয়। বরং রাশিয়ার সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা সম্পর্কের তিক্ততা আরও বাড়াবে বলেই মত কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয় দেশ নিজ নিজ দেশ থেকে অপর দেশের সকল কূটনীতিককে বহিষ্কার ও প্রত্যাহার করে নিয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার আলোচনার পথগুলোও মোটামুটি বন্ধ। বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারণায়ও রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছেন। এমনকি সম্প্রতি এক সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সহমত পোষণ করে জানান, 'পুতিন একজন খুনি।'

এই সকল ইস্যুর পাশাপাশি রাশিয়া গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৬ বছরের সাজা প্রদান করেছে সাবেক মার্কিন মেরিন সেনা কর্মকর্তাকে। এ ছাড়াও আরও একজন সাবেক মার্কিন মেরিন সেনা রয়েছেন রাশিয়ার কারাগারে। রাশিয়ার সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বিষয়ে জারি করা রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সেই সঙ্গে রাশিয়ায় পুতিনের বিরোধী দলের নেতার ওপর চলমান অত্যাচার নিয়েও কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন বাইডেন।

এত সব নেতিবাচক আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে এই বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন, কিন্তু তারপরও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে রাশিয়া। রাশিয়ার কূটনীতিকদের মতে, বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন। এটি তাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। সেই সঙ্গে উভয় দেশের মধ্যকার কোন আলোচনাই হচ্ছিলো না, যার সূচনা হচ্ছে এই বৈঠকের মাধ্যমে। এ ছাড়াও এই বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে তাদের সমান মর্যাদার দেশ হিসেবে মনে করছে, এটিকেও ইতিবাচকভাবে দেখছে ক্রেমলিন।

অন্যদিকে এই বৈঠককে সম্পর্কে শেষ হিসেবে দেখছেন মার্কিন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, রাশিয়ার সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে আলোচ্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করবে। এখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি কো সুস্পষ্ট উত্তর না দেন, তাহলে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপদজনক। কেননা সেক্ষেত্রে বৈঠকের বসার পরও ধোঁয়াশার মধ্যেই থাকবে দেশটি।

তবে আশার বিষয় হলো, এটি কোন সংক্ষিপ্ত বৈঠক নয়। বরং উভয় দেশ আলোচনার সুযোগ তৈরির জন্য রীতিমত আয়োজন করে এই বৈঠকের ব্যবস্থা করেছেন। আর এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী কূটনৈতিক বিশ্লেষক শেভটসোভা। তিনি ধারণা প্রকাশ করে জানান, বৈঠকের শুরুতে উভয় দেশ তাদের পরস্পরের দোষগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আলোচনার শুরু থেকেই মানবাধিকার ও মানবতার গান গাইবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টও বলবেন, বিভিন্ন সময় একই কাজ কর আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমন আলোচনা শেষে উভয় দেশ তাদের মধ্যকার দূরত্ব ঘোচাতে কিছু আলোচনা করবেন। যা কার্যকর হলে আবারো সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের।

সূত্র: রয়টার্স ও বিবিসি

Link copied!