তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: এরদোগান নাকি কিলিচদারোগ্লু, কার পাল্লা ভারী?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ১১, ২০২৩, ১২:০২ এএম

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: এরদোগান নাকি কিলিচদারোগ্লু, কার পাল্লা ভারী?

আসছে ১৪ মে তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা হিসেবে-নিকেষ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এ নির্বাচনের দিকে চেয়ে আছেন। তারা মনে করছেন নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি কামাল কিলিকদারোগ্লুর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচন?

 

তুরষ্কের এবারের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ দুই দশক ধরে তুরস্কের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি অনুপস্থিত। এটির অবসান ঘটানোর সুযোগ রয়েছে এবার।

পশ্চিমা বিশ্বও চাইছে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ক্ষমতায় আসুক। সৌদি আরবের সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলা ইরান, সিরিয়া, কাতারসহ বেশ কয়েকটি দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ায় এরদোগানের ভূমিকা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে এতে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের একচেটিয়া প্রভাবে ভাগ বসিয়েছে তুরস্ক। তাই তারা এরদোগানবিরোধী শিবিরকেই পছন্দ করছেন।

দীর্ঘ দুই দশক ক্ষমতায় থাকায় এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অভিযোগ এনেছেন অনেকে। পাশাপাশি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণসহ বিরোধী মত দমনের অভিযোগও করা হচ্ছিল। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতো এরদোগানের বিরুদ্ধে প্রচার প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই নানা কারণে এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিলিকদারোগ্লুর সামনে বিশাল সুযোগ!

এবারের নির্বাচনে এরদোগানের বিরুদ্ধে লড়ছে ছয়টি বিরোধী দলের জোট ন্যাশনাল এলায়েন্স। নেতৃত্বে রয়েছে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন  প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কিলিচদারোগ্লু। তাছাড়া, গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে  সিএইচপি কেন্দ্রীয় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। তাই দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে ৭৪ বছর বয়সী  কিলিচদারোগ্লুর।

সাম্প্রতিক সময়ে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে নির্বাচনে চিন্তাধারার পরিবর্তন বা কৌশল চেঞ্জ করার কারণে। এ পর্যন্ত যতগুলো জরিপ পরিচালিত হয়েছে, তার বেশিরভাগ জরিপে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। 

ক্ষমতায় যেতে দলের নীতিতেও পরিবর্তন এনেছেন সিএইচপি নেতা। সিএইচপি ক্ষমতায় থাকাকালে এক সময় তুরস্কে আজান নিষিদ্ধ ছিল। সিএইচপি এখন সেই নীতি থেকে সরে আসছে। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক এই আমলা ডানপন্থী দলগুলোর সাথে জোট করেছেন। ‘তুরস্কের গান্ধী’ খ্যাত এই নেতা এখন স্কুল ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের পর্দা করার অধিকার সমর্থন করেছেন।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের একটা বড় অংশ নতুন ভোটার। জন্মের পর থেকেই এসব ভোটার এরদোগানের শাসন দেখে আসছেন। স্বাভাবিক কারণে তারা এখন নতুন নেতৃত্ব, নতুন শাসক দেখতে চান। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি জরিপ এমনই বলছে।

এরদোগানের সম্ভাবনা কতটুকু?

অন্যদিকে,  ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন এরদোগান। আর দুই দশক ধরে ক্ষমতায় তার জাস্টিজ এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি। ধর্মনিরপেক্ষ দলের ক্ষমতায় আসা নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন তুরস্কের সাধারণ মুসলমানরা। এবারের নির্বাচনেও তারা পাশে থাকবেন বলে আশা করছেন এরদোগান। গত ৭ মে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের পিপলস পার্কে এক নির্বাচনী সভায় ১৭ লাখ মানুষের উপস্থিতি তাই-ই প্রমাণ করে। এমনটাই মত বিশ্লেষকদের।

২০১৬ সালে তুরস্বে ব্যর্থ সামরিক অভ্যূথান ঘটে।  এর পরই দেশের ভেতরে আইনের শাসন নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। আইন ও বিচার বিভাগে সংস্কারের দাবি ছিল অনেক দিনের। সেদিকটাতেও সফল হয়েছেন এরদোগান।

অন্যদিকে, অনেক দিন ধরে ইউরোপের সাথে অবিশ্বাস চলে আসছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অবস্থার উন্নয়নে এরদোগান যথেষ্ঠ সফল হয়েছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

কার পাল্লা ভারী?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার ব্যাপক পতন হয়েছে। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া দীর্ঘ দুই দশক ক্ষমতায় থাকায় এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণসহ বিরোধী মত দমনের অভিযোগও করা হচ্ছিল এরদোগান প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

এদিকে, ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্প ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এরদোগান সরকারের ওপর।  ওই ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক লাখ ভবন। প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ভবন তৈরিতে মানা হয়নি বিল্ডিং কোড। এনিয়ে যথেষ্ঠ ক্ষোভ রয়েছে এরদোগানের ওপর।

এরদোগানের জনপ্রিয়তায় ধস নামার আরও একটি কারণ হলো ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সে ইসলামপন্থিদের অংশগ্রহণ। অর্থাৎ এক সময় এরদোগানের সঙ্গী এবং সরকারের অংশ ছিলেন- এমন অনেক নেতাও নতুন দল গঠন করে ছয় দলীয় জোটে যোগ দিয়েছেন।

অন্যদিকে, গোঁড়া অর্থনৈতিক নীতি এবং সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থনাীতিবিদ কিলিচদারোগ্লু।  এ ছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ভিন্নমত দমন না করা, মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতিশ্রুতিও  দেন তিনি। এসব কারণে কিলিচদারোগ্লুর পাল্লা তুলনামূলক ভারি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Link copied!