দুই বছর পর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আগস্ট ২, ২০২১, ০১:০১ এএম

দুই বছর পর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের

মিয়ানমারের সেনাশাসক জেনারেল মিন অং হ্লাইং দেশটির নবগঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। রবিবার (১ আগস্ট) দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেওয়া এক ভাষণে দুই বছর পর অর্থাৎ ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে বহুদলীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

অভুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ছয় মাস পর দেওয়া এই ভাষণে মিন অং হ্লাইং আরও বলেছেন, তার সরকার দক্ষিণপূর্ব এশিয় দেশগুলোর সংগঠন (আসিয়ান) এর যে কোনো বিশেষ দূতের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যূত্থানে অং সান সু চির ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের ছয়মাস পর তিনি এই ঘোষণা দিলেন।

আসিয়ানের বৈঠকে মিয়ানমার জান্তা। ফাইল ছবি

ভাষণে মিন অং হ্লাইং মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। তবে কখন এ পদক্ষেপ নেয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘মিয়ানমারের বর্তমান সরকার, আসিয়ানের গঠন অনুযায়ী মিয়ানমারের সঙ্গে আসিয়ানের দূতের যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার কথা তাকে সহযোগীতা ও সমন্বয় করতে প্রস্তুত।’

গত এপ্রিলে আসিয়ানদেশগুলো মিয়ানমার সংকট সমাধানে ৫টি নীতিমালা ঠিক করে। সোমবার আসিয়ানভূক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের কথা রয়েছে। কূটনৈতিকরা বলছেন এই বৈঠকে তারা মিয়ানমারের সহিংসতা বন্ধ, জান্তা এবং বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সংকট সমাধানের জন্য বিশেষ দূত কে হবেন তা ঠিক করবেন।

মিয়ানমারের গণতন্ত্রমুক্তি আন্দোলনের অবিসংবাদী নেত্রী অং সান সু চি। ফাইল ছবি

গত ১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়ার পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় মিয়ানমারে। এরপর সাধারণ মানুষের সঙ্গে কয়েক দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় দেশটির সেনাবাহিনীর। এতে নয়শো জনের বেশি মানুষ নিহত হন, ব্যাপক ধরপাকড় চলে দেশব্যাপী। বহু মানুষ ভয় আর আতঙ্কে ভিটে ছাড়া হন। ভোট জালিয়াতি, দুর্নীতিসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয় এনএলডি নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর প্রতিবাদের ঝড় উঠে বিশ্বব্যাপী। নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ। নিজ দেশের মানুষকে হত্যার নিন্দা করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা বারবার এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এদিকে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে এখনো বিক্ষোভ করছে দেশটির সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

মিয়ানমারের জান্তাশাসন বিরোধী গণআন্দোলন। ফাইল ছবি

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক নির্বাহী ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘জান্তা সরকার হত্যা, নির্যাতন, সহিংসতা এবং নির্বিচারে আটকের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করছে। জনগণের ওপর এই হামলা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং এর জন্য তার জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। 

গত জুনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মিয়ানমারের অভ্যূত্থানের নিন্দা জানিয়ে বিরল প্রস্তাব পাশ করে, এই প্রস্তাবে দেশটিতে গণতান্ত্রিক সরকার পুর্নগঠনের দাবী জানানো হয়।

সম্প্রতি করোনার ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়ায় বেসামাল অবস্থা দেশটিতে। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বেগ পেতে হচ্ছে মিয়ানমার জান্তা সরকারকে। এর মাঝেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা এলো জান্তা প্রধানের তরফ থেকে।

সূত্র: এনডিটিভি, এএফপি।

 

Link copied!