নোবেল জয়ীদের শতকরা ৯৫ জনই পুরুষ!

দ্যা রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১০, ২০২১, ১২:৪৭ এএম

নোবেল জয়ীদের শতকরা ৯৫ জনই পুরুষ!

নোবেল পদককে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয় এই পুরস্কার। তবে নানা ইতিবাচকতার ভেতরে একটি কালো দিক রয়েছে নোবেল পুরস্কারে। আর তা হলো, এই পুরস্কারে লিঙ্গবৈষম্য প্রকট।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত নোবেল কমিটি নোবেল পুরস্কারের পাঁচ ক্যাটাগরির মধ্যে চারটি ঘোষণা করেছে। চার ক্যাটাগরিতে এবার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে ১০ জনকে। দুঃখ কিংবা হতাশার ব্যাপার যাই বলি না কেন, এই ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই পুরুষ। কেবল এবারই নয়, ১৯০১ সালে এই পুরস্কার প্রবর্তনের ১২০ বছরে এখন পর্যন্ত নোবেল পাওয়া ৯৪৪ জনের মধ্যে ৮৮৫ জনই পুরুষ, নারী মাত্র ৫৯ জন।

চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল জিতেছেন তানজানিয়ার শরণার্থী আবদুল রাজাক গুরনাহ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডেভিড জুলিয়াস ও আরডেম পাটাপোশিয়ান, পদার্থবিদ্যায় সুকোরো মানাবে, ক্লাউস হাসেলম্যান ও জর্জিও পারিসি, রসায়নে বেনজামিন লিস্ট ও ডেভিড ম্যাকমিলান এবং শুক্রবার (৮ অক্টোবর) শান্তিতে নোবেল পেলেন মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মোরাতভ। অর্থনীতিতে কে বা কারা নোবেল পেলেন তা আগামী সোমবার (১১ অক্টোবর) ঘোষণা করা হবে। তবে সেখানে সবাই নারী হবেন এমন আশা আসলে দূরাশা। আর সবাই নারী হলেও নোবেল বিজয়ী নারী-পুরুষের যে ব্যবধান তাও লাফ দিয়ে কমার কোন সম্ভাবনা নেই।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত নোবেল বিজয়ী নারীর ৫৮ জন। চলতি বছরের বিজয়ী মারিয়া রেসাকে ধরলে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৫৯ জনে। বিপরীতে ২০২০ সাল অবধি নোবেল বিজয়ী পুরুষের সংখ্যা ৮৭৬ জন। এবার এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন আরো ৯ জন। শতকরা হিসাবটা চমকে দেওয়ার মতো। হিসাব বলছে, চলতি বছর পর্যন্ত নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে শতকরা ৯৩ দশমিক ৭৫ জনই পুরুষ। হারাধনের দশটি ছেলের মধ্যে শেষ অবধি যেমন বাকী থাকে একজন, তেমনি নারীদের জন্য বাকী থাকে মাত্র ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। ফলে ব্যবধানটা কতো বড় তা বোধহয় হিসাব না করলেও চলে।

নোবেলে এমন লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডনের অধ্যাপক উইনস্টন মরগান রয়টার্সকে জানান, ‘নোবেল পুরস্কারে লিঙ্গবৈষম্য অনেক বড়। নারীদের নোবেল জেতার সংখ্যা খুবই কম। 

তবে মজার ব্যাপার হলো, নোবেল বিজয়ী নারীর সংখ্যা বেশি না হলেও পুরস্কার প্রদানকারী নরওয়ের নোবেল কমিটির অধিকাংশ সদস্যই নারী। বোস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথের মহামারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এলি মারে বলেন, ‘এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরীতে পথপ্রদর্শক বিজ্ঞানী হলেন ক্যাটালিন কারিকো ও কিজমেকিয়া করবেট। এই প্রযুক্তি বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে লড়াই করতে সহায়তা করছে। তবুও তারা নোবেল পাননি। বিষয়টি হতাশাজনক’। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের বছরের এই দুই নারীর কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে।

নোবেল অ্যাসেম্বলির চেয়ারম্যান জেসপার হেগস্ট্রোম। এই সংস্থাটি চিকিৎসায় নোবেল দেওয়ার বিষয়টি দেখভাল করে। নারীদের নোবেল জয় এবং এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরীতে প্রধান অবদান রাখা দুই নারী সম্পর্কে হেগস্ট্রোম বলেন, ‘নারীদের পুরস্কার কম জেতার কারণ ব্যাখ্যা করা সহজ নয়। তবে এটি বিজ্ঞানে নারীর প্রতিনিধিত্বকে প্রতিফলিত করেছিল’। 

তবে, নোবেল কমিটির বাছাই প্রক্রিয়ায় ‘লিঙ্গ’ কোনো ভূমিকা পালন করেছে কিনা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি হেগস্ট্রোম।

Link copied!