খগড়ে নাকি শশী: পরিবারতন্ত্রের বাইরে কে হচ্ছেন ভারতের কংগ্রেস প্রধান?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৮, ২০২২, ০২:৩৯ এএম

খগড়ে নাকি শশী: পরিবারতন্ত্রের বাইরে কে হচ্ছেন ভারতের কংগ্রেস প্রধান?

ভারতের অন্যতম প্রাচীণ রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ২০ বছরের বেশি সময় পর গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ দলটির সভাপতি হতে যাচ্ছেন। এ লক্ষে সোমবার হয়ে গেলো দেশজুড়ে প্রাদেশিক কমিটির (পিসিসি) প্রতিনিধিদের ভোটগ্রহণ।

১৮৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পার্টির প্রতিষ্ঠার পর কেটে গেছে প্রায় ১৩৭ বছর। এই দীর্ঘ যাত্রায় এবারসহ ষষ্ঠবারের মতো সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি বেছে নেওয়া হলো।

গান্ধী পরিবারের বাইরে সবশেষ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন সীতারাম কেশরী। নরসীমা রাওয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রায় দুই বছর পর কেশরীর কাছ থেকেই ১৯৯৮ সালে দায়িত্ব বুঝে নেন সোনিয়া গান্ধী। সোনিয়া গান্ধী ১৯ বছর কংগ্রেসের হাল ধরেছিলেন। ২০১৭ সালে ছেলে রাহুলের হাতে দায়িত্ব দিয়ে তিনি দলের নেপথ্যে এসে দাঁড়ান। সেই রাহুল সাধারণ নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বার দলের ভরাডুবির পর ২০১৯ সালে সরে দাঁড়ান।

ভারতের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের সভাপতি হওয়ার দৌঁড়ে মল্লিকার্জুন খগড়ে ও শশী থারুর দুজনই দেশজুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালান।

এদিন স্থানীয় সময় প্রায় ১০টার দিকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৪টায়।  পিসিসি’র ৯ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি সোনিয়া গান্ধীর ‘উত্তরসূরি’ বেছে নিতে ভোট প্রয়োগ করেন। দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোট দেন তারা। ১৯ অক্টোবর বুধবার ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার কথা।

কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির’ দপ্তরে নিজের ভোট দিয়েছেন। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধী ভদ্রও এ সময় তাঁর মা সোনিয়ার সাথে ছিলেন এবং নিজের ভোট প্রয়োগ করেন। কংগ্রেসের এক কর্মসূচীতে অংশ নিতে কর্নাটকে থাকা রাহুল গান্ধীও দলটির বল্লারি শিবিরের কেন্দ্রে তাঁর নিজের ভোট দিয়েছেন।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং কংগ্রেসের নতুন সভাপতি নির্বাচিত করতে রাজধানী নয়া দিল্লিতে ভোট দিয়েছেন।

সভাপতি বাছাইয়ে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতাদের একটি বড় অংশ খড়গেকে সমর্থন দিয়েছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। মল্লিকার্জুন খগড়েকে গান্ধী পরিবারের ‘অঘোষিত আনুষ্ঠানিক প্রার্থী’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সভাপতি পদে খড়গের নাম প্রস্তাব করেন কংগ্রেসের উচ্চ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন দলীয় নেতা। তাদের মধ্যে ভূপিন্দর সিং হুদা, দিগ্বিজয় সিং, মনিশ তিওয়ারি, আনন্দ শর্মা-সহ অনেকেই আছেন বলে জানিয়েছে ‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমস’। তিনি একটি দলের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে অন্যতম। একই সঙ্গে তিনি একজন দলিত প্রার্থীও।

মল্লিকার্জুনের আগে গান্ধী পরিবার চাইছিলো রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট সভাপতি হয়ে কংগ্রেসের হাল ধরুক। ১৯৯৮ সাল থেকে তিন দফায় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদে আছেন অশোক। তিনি অবশ্য চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রিত্ব ধরে রেখে কংগ্রেস সভাপতি হতে। যদি নিতান্তই সেটা না হয়, তাহলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে। তবে কংগ্রেসের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমান্ড তাতে সায় না দেওয়ায় সভাপতি পদে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

তাঁর সরে দাড়ানো নিয়ে আরেকটি কথাও শোনা যায়। সভপতি পদে নমিনেশন পত্র জমা দেওয়ার আগে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ কংগ্রেসের সভাপতি হলেও রাহুল গান্ধী পরামর্শদাতা হিসেবে থাকবেন।

প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর এ মন্তব্যে প্রার্থী হতে চাইছিলেন না অশোক গেহলট। ৭১ বছর বয়সী  কংগ্রেসের এই  প্রবীণ নেতা ভালো করেই জানেন,  কংগ্রেস সভাপতি হলেও তাঁকে কাজ করতে হবে সোনিয়া-রাহুলদের ইশারাতেই। অথচ হাত থেকে রাজস্থানের গদি চলে যাবে বিরোধী শচীন পাইলটের হাতে। পরে রাজস্থানের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিনি সভাপতি প্রার্থী হওয়া থেকে সরে দাঁড়ান।

অপর প্রার্থী শশী থারুর কংগ্রেসের ‘বিদ্রোহী’ শিবিরের নেতা। দলের জি-২৩ গোষ্ঠী বা বিক্ষুব্ধ ২৩ জন নেতার মধ্যে অন্যতম প্রধান মুখ তিনি। দলের ভেতরে খড়গের তুলনায় তিনি কম সম্ভাবনাময় ছিলেন। তারপরও দৌঁড় থেকে যান সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শশী থারুর।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি পদে কাজ করা শশী থারুরের বয়স ৬৬ হলেও তিনি সক্রিয় রাজনীতি করেছেন দেড় দশকেরও কম সময়।

শশী ভারত এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা যেমন নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, গার্ডিয়ানে কলাম লেখেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাঁর একটি পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে।

মল্লিকার্জুন নাকি শশী থারুর? কে হচ্ছেন ভারতের অন্যতম পুরনো রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সভাপতি? ফলাফল জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত।

Link copied!