পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এরদোগান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মে ৩০, ২০২৩, ১১:০৪ পিএম

পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এরদোগান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

টানা তৃতীয়বারের মতো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটে বিজয়ী হওয়ার এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলতসও, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষনেতারা।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোগান পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানাতে আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে যেভাবে তাড়াহুড়ো লেগে গিয়েছিল তা থেকে বিশ্বে তুরস্কের কৌশলগত গুরুত্ব সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই গুরুত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট ৬৯ বছর বয়সী এরদোগান দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন এবং এই ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে পারায় তাকে অনেক আগেভাগেই অভিনন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর নেটো জোটে তুরস্কের মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান ক্রেমলিনকে পরিত্যাগ করেনি। একারণে এরদোগানকে পছন্দ করতেই পারেন পুতিন।

এছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের ব্যাপারে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব,  কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ চলাচলে মস্কো-কিয়েভের সমঝোতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলেএরদোগানের।

আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে শুধু যে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনই এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তা নয়। এই দৌড়ে পিছিয়ে থাকেন নি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁও।

জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ব্রিটেন, জার্মানি, নেটোর পক্ষ থেকেও এরদোগানের বিজয়ে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক টুইট বার্তায় বলেন, বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা একসঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখার দিকে তাকিয়ে আছি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘ফ্রান্স এবং তুরস্ককে অনেক চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া অব্যাহত রাখবো।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা নেতারা ক্রেমলিনের সঙ্গে এরদোগানের এই ঘনিষ্ঠতা পছন্দ করেন না। দুই দশকের শাসনামলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খর্ব করার মতো বিষয়গুলো মেনে নিতে পারলেও  পশ্চিমা দেশগিুলোর কাছে তুরস্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। কারণ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ায় নেটোর সব অভিযানেই এই দেশটি অংশ নিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এরদোগান হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলছেন, কিন্তু একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে তিনি সামরিক সাহায্যও দিয়ে আসছেন। নেটো সম্প্রসারণের ব্যাপারেও তুরস্কের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফিনল্যান্ডের নেটোতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তুরস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে। রাশিয়ার কথা চিন্তা করে তুরস্ক অনুমোদন নাও দিতে পারতো। নেটোর সংবিধানে বলা হয়েছে,  কোনো একটি সদস্য দেশ আপত্তি জানালে নতুন কোনো দেশকে এই জোটের সদস্য করা যাবে না। তুরস্ক সে পথে যায়নি। তবে সুইডেনের বিষয়টি এখনও রাজনৈতিক কারণে ঝুলিয়ে রেখেছে।

এরদোগান একসময় অনেক চেষ্টা চালিয়েছেন তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করতে। ওই লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় এখন তুরস্ককে ‘শক্তিশালী রাষ্ট্র’ করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোর সাথে তুরস্কের বন্ধন আরও দৃঢ় করছেন। শুধু তাই নয়, সব মিত্র দেশগুলোর সাথে গড়ে তুলেছেন “লেনদেনের সম্পর্ক।” এসব সম্পর্কের পেছনে তিনি তুরস্কের স্বার্থকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

তুরস্কের কৌশলগত গুরুত্বকে পশ্চিমা দেশগুলো ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে বর্ণনা করে থাকে। যদিও ইউক্রেনে ইস্যুতে তুরস্কের এই অবস্থান বদলে গেছে। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো চাইছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ দল তুরস্কের ক্ষমতায় আসুক। তবে সে আশা ভঙ্গ হওয়ায় তুরস্ককে তথা এরদোগানকে এখন আরও গুরুত্ব দিচ্ছে ওই দেশগুলোর নেতারা।সূত্র: বিবিসি বাংলা

Link copied!