বিপিন রাওয়াত: যার হাত ধরে ভারতের প্রতিরক্ষায় নবযুগ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ১০, ২০২১, ১২:৪৪ এএম

বিপিন রাওয়াত: যার হাত ধরে ভারতের প্রতিরক্ষায় নবযুগ

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত।স্থানীয় সময় বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে  দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিপিন রাওয়াতকে বহনকারী সেনা হেলিকপ্টারটি। ওই দুর্ঘটনায় বিপিন রাওয়াত আর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াতসহ ১৩ জন আরোহী নিহত হয়েছেন।

বিপিন রাওয়াত ছিলেন স্বাধীন ভারতের সামরিক ইতিহাসে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখার প্রথম সর্বাধিনায়ক। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি এই পদে নিযুক্ত হন তিনি। সৃষ্টি করেন ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের।

১৯৫৮ সালের ১৬ মার্চ। ভারতের অন্যতম চৌকষ এই জেনারেল উত্তরাখন্ডের পৌড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। রাজপুত পরিবারের জন্ম বিপিনের বাবা লক্ষ্মণ সিংহ রাওয়ত ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল। বাবার পথ ধরেই সেনাবাহিনীতে আসেন বিপিন।

উচ্চ-উচ্চতায় যুদ্ধ এবং বিদ্রোহবিরোধী অভিযানে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন বিপিন। ভারতের অশান্ত অঞ্চলকে শান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হতো তাকে। এ কারণেই হয়তো দীর্ঘ কর্মজীবনের বড় অংশ জম্মু ও কাশ্মীরে কাটিয়েছেন চৌকস এই অফিসার।

১৯৮০-র দশকে চীনের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনার সময় ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ওই সময় সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল হিসেবে জেনারেল রাওয়াত তার ব্যাটালিয়নের নেতৃত্ব দেন।

ভারতের প্রথম আনুষ্ঠানিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক শুরু করেন জেনারেল রাওয়াত। ২০১৫ সালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নাগা বিদ্রোহীদের আক্রমণ করার জন্য তিনি একটি প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়ন পাঠান।

এর পুরষ্কার হিসেবে ২০১৬ সালে তিনি ভারতের ২৭তম ভারতীয় সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। দায়িত্ব নেন ভারতের ১০ লাখ সদস্যের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে। তার থেকে সিনিয়র দুই অফিসারকে ডিঙ্গিয়ে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

অনুপ্রেরণাদায়ক কমান্ডার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই জেনারেল মাঝে মাঝে রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি একবার আসামে মুসলিম-অধ্যুষিত অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট পার্টির উত্থানকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ বলে মন্তব্য করেন। এতে সংখ্যালঘু নেতারা তাকে ভারতীয় জনতা পার্টির( বিজেপি) ‘তোতাপাখি’হিসেবে আখ্যা দেন।

জেনারেল বিপিন রাওয়াত ভারতের সামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। মোদী সরকার সেনা বিধি সংশোধন করে বিপিন রাওয়াতকেই ভারতের তিন বাহিনীর প্রথম ‘সিঙ্গল পয়েন্ট অ্যাডভাইজর-এর দায়িত্ব দেয়।

বিপিন রাওয়াত ৪০ বছরের কর্মজীবনে একাধিক সম্মান পেয়েছেন। সেনাবাহিনীর বহু পদক অর্জন করেছেন। পরম বিশিষ্ট সেবা মেডেল, উত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল, অতি বিশিষ্ট সেবা মেডেল, যুদ্ধ সেবা মেডেল, সেনা মেডেল, বিশিষ্ট সেবা মেডেল ও বিদেশ সেবা মেডেল পেয়েছেন।

কৌশলগত বিষয়ে বিপিনের অন্তর্দৃষ্টি এবং দৃষ্টিকোণ ছিল ব্যতিক্রমী। ভারতের অন্যতম প্রধান এই জেনারেলকে অবসরের আগে পাঁচতারা ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করার কথা ছিল। তার আগেই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ৬৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বিপিন রাওয়াত।

Link copied!