ভয়াবহতম ও লজ্জার নাগাসিকা দিবস আজ

ডেস্ক রিপোর্ট

আগস্ট ৯, ২০২১, ০৪:১৯ পিএম

ভয়াবহতম ও লজ্জার নাগাসিকা দিবস আজ

আজ ৯ আগস্ট। মানব ইতিহাসের ভয়াবহতম এবং লজ্জার ‘নাগাসিকা দিবস’। ৭৬ বছর আগে এদিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্ষেপ করা ফ্যাটম্যান নামের পরমাণু বোমা হামলায় কেঁপে উঠেছিল জাপানের নাগাসাকি। প্রায় পুরো শহরের আকাশে বাতাসে ছিল কান্নার রোল, মাটিতে ছিল যেনো মৃত্যুর অগ্নিনৃত্য আর রক্তের হোলিখেলা।

১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট। হিরোশিমায় আঘাত হানা লিটল বয় নামের পরমাণু বোমা লিটল বয়ের মতো কাজ করেনি। মুহুর্তের মধ্যে শহরটির প্রায় ৬০ ভাগ ধবংসস্তুপে পরিণত করে আর ৭৫ হাজার মানুষের প্রাণ নিয়ে সে প্রমাণ করে কোনোভাবিই সে লিটল বয় ছিল না।

১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট। আবারও মার্কিন পরমাণু বোমা হামলা। স্থান জাপানের ব্যস্ততম নগরী নাগাসাকি। এবার হানা দিল লিটল বয় নয়, ফ্যাটম্যান। স্থানীয় সময় রাত পৌনে ৪টা। জাপানের ব্যস্ততম ওই নগরীর লোকজন তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এমন সময় ঘুমন্ত মানুষের ওপর জঘন্যতম বোমা হামলার ঘটনা ঘটালো হ্যারি এস ট্র্যুম্যান প্রশাসন। ফ্যাটম্যান বোমাটি বিস্ফোরিত হয়ে নাগাসাকি শহরকে চোখের পলকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে। নিমিষে ঝরে যায় প্রায় ৪০ হাজার প্রাণ। আহত হয় আরও ৬০ হাজার মানুষ।

জাপানের নাগাসাকি শহরে ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত পৌণে ৪টার দিকে এই পরমাণু বোমা ফ্যাটম্যান নিক্ষেপ করা হয়। 

১৯৪৫ সালের ৮ মে। জার্মানীর আত্মসমর্পণের পর ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটলেও অপর অক্ষ্যশক্তি জাপান তখনও মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেনি। আত্মসমর্পনের সময়সীমা শেষ হওয়ারপরই বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়েই জাপানের পার্ল হারবার হামলার নিষ্ঠুর জবাব দেয় মার্কিনীরা। নাগাসাকিতে হামলার ৫ দিন পর ১৪ আগস্ট আত্মসমর্পন করে জাপান।

জাপানে এখনো ৫০ হাজার মার্কিন সেনা আছে। আমেরিকার পরমাণু-ছাতার তলায় এখনো টোকিও  প্রশাসন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানকে সেনাবাহিনী রাখতে দেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিবেশী পরমাণু অস্ত্রধর চীনের থেকে বাঁচার জন্যও টোকিও পুরোপুরি ওয়াশিংটনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

যুদ্ধে পারমানবিক বোমা তৈরির জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে চিঠি লিখেছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইস্টাইন। তার আপেক্ষিক ত্বত্ত্বের ভিত্তিতেই তৈরি হয় পারমানবিক বোমা।  তবে হিরোসিমা ও নাগাসাকির ভয়াবহতায় ওই চিঠির জন্য দুঃখ করেছিলেন আইনস্টাইন। স্বীকার করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ওই চিঠি লেখা ছিল তার জীবনের বড় ভুল।

জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির ঘটনায় মার্কিন শক্তির আধিপত্যে বিশ্বের অনেক দেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ফলে পরমাণু বোমা তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয় দেশে দেশে। এরই ধারাবাহিকতায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৯ সালে, ব্রিটেন ১৯৫৭ সালে, ফ্রান্স ১৯৬০ সালে, ১৯৬৪ সালে  চীন, ১৯৭৪ সালে ভারত, এর দুই যুগ পর পাকিস্তান ও ২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়া পারমানবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়।

তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ভয়াবহতা আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন নাগাসাকির লাখো মানুষ। তারপরও পারমাণবিক শক্তির নির্ভরতা কমিয়ে আনার অঙ্গিকার নিয়ে প্রতিবছর দেশটিতে পালিত হয় নাগাসাকি দিবস। সে দুঃসহ স্মৃতি বিশ্ব শক্তিধরদের পারমাণবিক শক্তির নির্ভরতা কমিয়ে আনার পথে ফিরিয়ে আনুক-এটাই এখন সবার প্রত্যাশা।

Link copied!