আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা হাতে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে তালেবান গোষ্ঠী। একই সাথে আফগানিস্তানে তাদের যুদ্ধের ‘সমাপ্তি’ হয়েছে বলেও ঘোষণা দিয়েছে তারা। রবিবার (১৫ আগস্ট) তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের এক মুখপাত্র একথা জানান। খবর রয়টার্সের।
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের এক মুখপাত্র তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলেছেন। মোহাম্মদ নাইম নামে তালেবানের ওই মুখপাত্র বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে তালেবান বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে চায় না এবং শাসনের ধরন ও রাষ্ট্রীয় গঠন কাঠামো খুব শিগগিরই পরিষ্কার করা হবে।
শরীয়াহ আইনের মধ্যে থেকেই নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে তালেবানের ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘একইসঙ্গে বাকস্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হবে। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবান শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়।’ ইতোপূর্বে কয়েকটি দেশের সঙ্গে শুরু হওয়া যোগাযোগের চ্যানেলগুলো আরও উন্নত করতে তালেবান আগ্রহী বলে জানানো হয়।
আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তালেবানের এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সঙ্গে বসতে সকল দেশ ও অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পরই দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছেড়েছেন। রবিবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় তিনি প্রতিবেশী দেশ তাজিকিস্তানের উদ্দেশে কাবুল ত্যাগ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
এর আগে স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ আগস্ট) সকালে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর জালালাবাদের দখল নেয় তালেবান। কোনো যুদ্ধ ছাড়াই তালেবান শহরটির দখল নিতে সক্ষম হয়। জালালাবাদ দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে অন্তত ২৮টির রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে।পরে একই দিন চারদিক দিয়ে রাজধানী কাবুলকে অবরুদ্ধ করে রাখে তালেবান। পরে তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিকে রাজি করাতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বৈঠক করে। প্রায় পৌণে এক ঘন্টার বৈঠকে শেষে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আশরাফ গনি।
বিকেল ৪টার দিকে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন আশরাফ গনি। আর সন্ধ্যার পরেই রাজধানী কাবুল ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ তাজিকিস্তানে চলে যান তিনি।
নিজের দেশ ছাড়ার পর আফগানিস্তানের পদত্যাগকারী প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি প্রথমবারের মত একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, কাবুলে রক্তপাত এড়াতে আমি দেশ ছেড়েছি। আমার সামনে দুটি বিকল্প ছিল। প্রথমত রক্তপাত এড়াতে দেশ ছাড়া। দ্বীতিয়ত, সশস্ত্র তালেবানদের মুখোমুখি হওয়া যারা প্রাসাদে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। রবিবার (১৫ আগস্ট) তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক থেকে এক পোস্টে দেওয়া বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে আরও জানানো হয়, আশরাফ গনি বলেন, ‘তালেবান জিতেছে... সম্পদ, সম্মান এবং নিজ দেশের জনগণকে রক্ষার দায়িত্ব এখন তাদের।’ তবে তিনি এখন কোথায় আছেন, তা উল্লেখ করেননি আশরাফ গনি।
সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স।