যে ভূমিকার কারণে এবার দেওয়া হল শান্তির নোবেল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৮, ২০২২, ১২:৫১ এএম

যে ভূমিকার কারণে এবার দেওয়া হল শান্তির নোবেল

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার মানেই আলোচিত আর বিতর্কিত এক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর এই পুরস্কার ঘোষণার আগে থেকেই শুরু হয় নানা আলোচনা আর গুঞ্জন। পরে যখন পুরুস্কারটি ঘোষণা হয়, এরপরই শুরু হয় সমালোচনা আর বিতর্ক।  

ব্যক্তি জীবনে আলফ্রেড নোবেল ছিলেন রসায়নবিদ, প্রকৌশলী ও অস্ত্রনির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিক। বলা হয়ে থাকে, নিজের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ডিনামাইটের ধ্বংসাত্মক ব্যবহার দেখে শেষ জীবনে খুবই অনুতপ্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। আর এ কারণেই মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে একটি দানপত্র তৈরি করেন। ১৮৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর নোবেল পুরস্কারের জন্য মোট সম্পত্তির ৯৪ শতাংশ দান করে আলফ্রেড নোবেল সেই দানপত্রে স্বাক্ষর করেন। দানপত্র অনুযায়ী ১৯০১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্মাননা নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়। ১০ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যুদিন। এদিনই পুরুষ্কারটি প্রাপকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

আলফ্রেড নোবেলের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর প্রশংসনীয় এই কাজ বিভিন্ন সময় নানাবিধ কারণে সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রে সমালোচনা সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়। চায়ের কাপে এ নিয়ে ওঠে যুক্তি-তর্কের ঝড়। 

এ বছরের শান্তির নোবেল ঘোষণা করা হয়েছে আজ শুক্রবার। যৌথভাবে এই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি, রাশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন মেমোরিয়াল ও ইউক্রেনের মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিস (সিজিএস)। তাঁদের ভূমিকা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি

অ্যালেস বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী। তাঁর বয়স ৬০ বছর। তিনি বর্তমানে দেশটির কারাগারে আছেন। বিচার-পূর্ব আটকাবস্থায় আছেন তিনি। অ্যালেস দেশটির ভিয়াসনা হিউম্যান রাইটস সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। মানবাধিকার সংগঠনটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

বেলারুশের রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ওপর দেশটির নেতা আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর নৃশংস দমন-পীড়নের প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকার সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পশ্চিমা সমর্থিত এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরকার ভালো চোখে দেখে না।

তবে অ্যালেস সম্পর্কে নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি বলেছে, তিনি তাঁর দেশে গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

কর ফাঁকির অভিযোগে ২০১১ সালে অ্যালেসকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। এই অভিযোগে তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে তিনি কারামুক্তি পান।

বেলারুশে নির্বাচন স্বচ্ছ হয়নি বলে দাবি করে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে ২০২০ সালে অ্যালেসকে আবার আটক করা হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থেকে যান লুকাশেঙ্কো।

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ার বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসেন বলেছেন, অ্যালেস বেলারুশে মানবাধিকারের জন্য তাঁর লড়াইয়ে এক ইঞ্চিও ছাড় দেননি।

সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিস (সিজিএস)

সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিস (সিজিএস) ইউক্রেনের একটি শীর্ষ স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন। ২০০৭ সালে সিজিএস প্রতিষ্ঠিত হয়। দখলকৃত ক্রিমিয়ায় রাজনৈতিক নিপীড়ন পর্যবেক্ষণ করে আসছে সিজিএস। এই সংস্থাটিও পশ্চিমা সমর্থিত এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থান।

সংগঠনটি দনবাস যুদ্ধের সময় সংগঠিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ নথিভুক্ত করেছে। তাঁরা ক্রেমলিনের রাজবন্দীদের মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচার চালিয়ে আসছে।

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই হামলার পর থেকে সংগঠনটি ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধ শনাক্ত ও নথিভুক্তের প্রচেষ্টায় নিযুক্ত রয়েছে।

মেমোরিয়াল

মেমোরিয়াল রাশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন। নানা বিতর্কিত ভূমিকার কারণে চলতি বছরের শুরুর দিকে সরকারের পক্ষ থেকে সংগঠনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৮৭ সালে মেমোরিয়াল প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাত্র চার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় মেমোরিয়াল।

মেমোরিয়াল রাশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো মানবাধিকার সংগঠন। তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সোভিয়েত–যুগে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কাজ করেছে। তারা রাশিয়ার মানবাধিকার নিয়েও কাজ করেছে।

Link copied!