যেভাবে ২৪ ঘন্টার এক গোপন সফরে কিয়েভ পৌঁছান বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩, ০৮:২১ পিএম

যেভাবে ২৪ ঘন্টার এক গোপন সফরে কিয়েভ পৌঁছান বাইডেন

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার চলমান যুদ্ধের মধ্যেই গতকাল সোমবার গোপনে কিয়েভ সফর করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রথম বার্ষিকীর তিনদিন আগেই এই প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেন সফর করলেন।

বাইডেনের এ সফর ছিল অত্যন্ত গোপনীয়। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে পৌঁছানোর আগে কেউ এ সফর সম্পর্কে জানতে পারেনি। যদিও হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, সফরের কয়েক ঘণ্টা আগেই নাকি বিষয়টি মস্কোকে জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই গুরুত্বপূর্ণ সফরের তথ্য গোপন রাখা এবং কীভাবে বাইডেন ওয়াশিংটন থেকে কিয়েভ পৌঁছলেন তা জানতে জনমনে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস,সিএনএন ও সিবিএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটন থেকে যাত্রা শুরু করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।  স্থানীয় সময় রবিবার ভোর চারটার দিকে ওয়াশিংটনের পার্শ্ববর্তী অ্যান্ড্রুজ বিমানঘাঁটি থেকে মার্কিন বিমানবাহিনীর বোয়িং ৭৫৭ উড়োজাহাজে চেপে বসেন ৮০ বছর বয়সী বাইডেন।  মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী সি-৩২ নামে উড়োজাহাজটির  সব কটি জানালায় পর্দা দেওয়া ছিল।

কিয়েভের উদ্দেশ্যে যাত্রার সময় তার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মী, একটি ছোট চিকিৎসক দল,  কয়েকজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্ট ও দুইজন সাংবাদিক। সাংবাদিকরা বাইডেনের সফর ‘সঠিক সময়ের আগে’ প্রকাশ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

বাইডেনের সফরসঙ্গী সাবরিনা সিদ্দিকি নামে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টারের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়,  রাত সোয়া দুইটার মধ্যেই তিনি ও অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) আলোকচিত্রী ইভান ভুচি বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে যান। এসময় তাঁদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হয়। পরে তাঁরা সেগুলো কিয়েভে পৌঁছে ফেরত পান।

ওয়াশিংটন থেকে বাইডেনের প্রাথমিক গন্তব্য ছিল পোল্যান্ড। তবে জ্বালানি নেওয়ার জন্য  জার্মানির রামস্টেইনে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে থামে বাইডেনকে বহনকারী উড়োজাহাজটি।  ওইসময়ও  উড়োজাহাজের জানালা খোলা হয়নি। সেখান থেকে উড়াল দিয়ে উড়োজাহাজটি পোল্যান্ডের রেজেসজো-জাসিওঙ্কা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এ বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে বাইডেন যান ইউক্রেন সীমান্তে। তবে রিপোর্টার সাবরিনা সিদ্দিকি জানান, গাড়িবহরের সামনে ও পেছনে সাইরেন বাজানো হয়নি। দেখে কেউ বুঝতে পারবে না, এ বহরে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশের রাষ্ট্রপ্রধান আছেন। পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের একটি রেলস্টেশনে গিয়ে বাইডেন কিয়েভ অভিমুখী ট্রেনে উঠেন।

ওয়াশিংটন থেকে জার্মানি হয়ে পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের সীমান্ত এলাকায় ট্রেনে চেপে বসা পর্যন্ত একই উড়োজাহাজে ভ্রমণ করলেও বাইডেনের দেখা পাননি সাবরিনা ও ইভান। সাবরিনা আরও বলেন, নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল পুরো স্টেশন–ট্রেন।

পোল্যান্ডের সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টার যাত্রা শেষে ট্রেনটি সোমবার সকাল ৮টার পর কিয়েভে পৌঁছায়। যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো কিয়েভে পৌঁছান বাইডেন।

তবে কিয়েভ সফরের  বিষয়টি ‍পুতিন প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল বলে জানিয়ছে হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এপি’কে বলেন, ‘আমরা কয়েক ঘণ্টা আগে সফরের বিষয়টি রাশিয়াকে জানিয়েছিলাম, যেন কোনো সংঘাতের মধ্যে না পড়তে হয়। এ ছাড়া ইউক্রেনের সঙ্গে যোগাযোগের প্রকৃতি সংবেদনশীল হওয়াও একটা কারণ।’ তবে এ বিষয়ে ক্রেমলিনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Link copied!