মিয়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সান সু চি, দেশের এই দুর্দিনে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেলেও তার ‘গ্রহণযোগ্যতা’ হারিয়েছেন। সোমবার (১৪ জুন) মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে শুরু হয়েছে গত ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চি-র বিচার।
সু চির বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে ওয়াকি-টকি রাখা, মহামারীর বিধি ভেঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা, দেশের গোপন তথ্য বিদেশে পাচার, ঘুষ নেয়াসহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ উস্কে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার শুনানি ২৬ জুলাই পর্যন্ত চলতে পারে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
দোষী প্রমাণিত হলে মোটা অঙ্কের অর্থদণ্ডসহ কমপক্ষে ১৫বছরের কারাদণ্ড দেয়া হতে পারে। এছাড়া সু চি-র বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়ায়, তার দল আপাতত সরকার চালাতে বা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিচার্ড হর্সলে বলেন, ‘সময় যতো ঘনিয়ে আসছে সু চিকে মুক্তি দেয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপরুন্ত জেনারেল মিন অং হ্লিয়াং সু চি ও এনএলডির প্রভাবমুক্ত একটি রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে সামরিক জান্তার পক্ষে সাফাই গেয়ে নিজের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করেছেন সু চি। হর্সলে বলেন, ‘অভ্যুত্থানের এই সময়ে তার যখন আন্তর্জাতিক সমর্থন সবচেয়ে জরুরি ছিলো তখন তিনি তার আন্তর্জাতিক সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতাকে নষ্ট করে বসে আছেন। শুধু রোহিঙ্গা ইস্যুতেই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই তিনি নীতি হারিয়েছেন। সরকারে যুক্ত থাকাকালে গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে তার অবস্থান মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিলো না। তিনি সাংবাদিক ও সমালোচকদের বন্দির পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।’
অধিকারকর্মী ও বিক্ষোভের নেত্রী থিনজার সুনলেই ইয়ি বলেন, ‘আমার নারী অধিকার কর্মী হওয়ার পেছনে সু চিই ছিলেন প্রেরণা। কিন্তু যখন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হলো আমি তার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করি। কিন্তু আমাকে তখন তোপের মুখে পড়তে হয়েছিলো। এখনো মিয়ানমারের মানুষ সু চির কথা চিন্তা করে কাঁদছেন। কিন্তু সু চি যদি জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে চলা সশস্ত্র বিপ্লবের বিরুদ্ধে কিছু বলে বসেন আমরা অবাক হবো না। তিনি বর্তমান সংবিধান কর্তন বা রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করতেও মত দেবেন না।’
সূত্র: আল জাজিরা।