আওয়ামী লীগের ইশতেহার

নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩, ০৫:২৪ পিএম

নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি

সংগৃহীত প্রতীকি ছবি

সম্প্রীতির ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এ ইশতেহার ঘোষণা করবেন।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে ‘দিন বদলের সনদ‘, ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ ‘তারুণ্যের শক্তি’, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’র পর এবার ‌‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ইশতেহার দিল। সেই ইশতেহারে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে কী করতে চায়; জানালো তারা। আবার সরকারে এলে দলটি তাদের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেবে তা জানিয়েছে। এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের শ্লোগান হলো স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‍‍`সাম্প্রদায়িকতা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ। মুসলমান তার ধর্মকর্ম করবে। হিন্দু তার ধর্মকর্ম করবে। বৌদ্ধ তার ধর্মকর্ম করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না।‍‍`- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই আদর্শকে ধারণ করে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় কমিশন গঠন ও পৃথক আইন প্রণয়নের অঙ্গীকার করা হয় এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৩(ক) তে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ সংবিধানের এই ধারা সুরক্ষায় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়। যার অংশ হিসেবে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে বলে জানানো হয়। আওয়ামী লীগ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আবশ্যক পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রাখবে বলে ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ‘এথনিক ক্লিনজিং’ অপনীতির কবলে পড়ে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিংস্র আক্রমণ ও বৈষম্যের শিকার হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অসংখ্য নর-নারী নিহত হয়েছে; অসংখ্য নারী হয়েছে ধর্ষণের শিকার; তাদের ঘরবাড়ি, জমি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল ও লুণ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ এই অমানবিক ঘটনাগুলোর বিচারকার্য সম্পন্ন করবে এবং তার পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদে অর্পিত সম্পত্তি আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং অর্পিত সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট সমস্যা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামীতে নির্বাচিত হলে আইন প্রয়োগে বাধা দূর করা হবে বলে জানানো হয়।

ইশতেহারে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও চা-বাগানে কর্মরত শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর ওপর সন্ত্রাস, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চির অবসান, তাদের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম, মান-মর্যাদার সুরক্ষা এবং রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার নীতি অব্যাহত রাখবে।

এছাড়াও বস্তি, চর, হাওর, বাঁওড়, উপকূলসহ দেশের সকল অনগ্রসর অঞ্চলের সুষম উন্নয়ন এবং ওই সব অঞ্চলের জনগণের জীবনের মানোন্নয়ন অগ্রাধিকার পাবে বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়।

এরই মধ্যে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য যে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, সে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে এই ইশতেহারে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জমি, বসতভিটা, উপাসনালয়, বনাঞ্চল, জলাভূমি ও অন্যান্য সম্পদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণকে সমাজের ও উন্নয়নের মূল স্রোতে আনার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত আছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোর বৈচিত্র্যময় রীতিনীতি ও ঐতিহ্যগুলোকে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করার জন্য সরকারের তরফ থেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জাতিগত সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় আঞ্চলিক পরিষদ এবং জেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে। ফলে স্থানীয়, ভৌগোলিক, আর্থসামাজিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটনশিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পের বিকাশে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উচ্চমূল্যের মসলা চাষ, কফি-কাজুবাদাম চাষ, তুলা চাষ, সৌরবিদ্যুৎ ইত্যাদি জনমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

মন্দির, শ্মশান, প্যাগোডা, গির্জা, সিমেট্রির উন্নয়নে অনুদান প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টসমূহের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সার্বিক কল্যাণ সাধনে নিয়মিত কার্যক্রমসমূহ অব্যাহত আছে।

Link copied!