আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দফায় দফায় বাড়ছে মসলার দাম। দুই মাসের ব্যবধানে মসলার বাজারে এলাচির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।
গত বছরের তুলনায় এ বছর দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে, তেজপাতা, শুকনা মরিচ, হলুদ সহ অন্যান্য মসলার দামও বেশ চড়া।
“যখন দেখবেন যে ঈদ বা কোনো অকেশন থাকে, তখন সবকিছু মসলা বলেন ক্যান, নিত্যপ্রয়োজনীয় যেগুলো জিনিস রয়েছে, সবগুলোর দামই বেড়ে যায়”
মিরপুর-১০ নম্বরে বউ বাজারে মসলার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এলাচির দাম এ বছর ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া বাড়তি চাহিদা, অতিরিক্ত শুল্ক ও ডলার সংকটের কারণে ঈদের আগেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের মসলার দাম।
বিক্রেতা সালামুদ্দিন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “এলাচের দামটা একটু বেশি। বাড়ে না খালি গোলমরিচের দাম। কালো গোলমরিচের দাম বাড়ে না। এটাই আগের দাম আছে। আর সবগুলোরই দাম একটু একটু বেশি, আস্তে আস্তে বাড়তে আছে।”
তিনি আরও বলেন, “দারুচিনি কেজি হলো ৪৭০ টাকা, এলাচি হলো ২৯০০ টাকা, কালো এলাচ হলো ৩০০০ টাকা, গোলমরিচ হলো ৭৫০ টাকা, লবঙ্গ হলো ১৪৮০ টাকা কেজি, আর জিরার দামডা বাড়ছে ৫৬০-৫৮০ থেকে হইয়্যা গ্যাছে এক লাফে ৭০০ টাকা।”
সালামুদ্দিন বলেন, “মনে করেন ১ কেজি এলাচি, যে এলাচটা ২৯০০ টাকা আমি বলছি, সেই এলাচটার দাম আছিল ১৬৫০ টাকা। অখন ২৯০০ টাকা পাইকারে আমাগোরে ধরে। আমরা যারা খুচরা (ব্যবসায়ী) ৩০০০ টাকায় বেচতে হয় ২৯৫০ টাকায় বেচি। কেজিপ্রতি মনে করেন, ১৬০০ টাকা থেকে ২৯০০ টাকা, ১২০০-১৩০০ টাকা বাড়ছে আগের থেকে।”
দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে আরেক বিক্রেতা শফিউদ্দিন বলেন, “সব মসলার দাম বাড়তেছে। কোরবানির ঈদের আগে সব মসল্লার চাহিদা বেশি। জিরা ছিল ৬৫০ টাকা, এখন জিরা ৭৫০। এই এক সপ্তাহে ১০০ টাকা বাড়ছে। যে এলাচি ছিল ২২০০-২৩০০ টাকা, সেই এলাচি ৩৫০০ টাকা। কেজিতে বাড়ছে ১২০০ টাকা। যে গোলমরিচ ছিল ৭০০, এখন ৯০০ টাকা। দিনকে দিন সব মসল্লার দাম বাড়তেছেই। প্রত্যেক দিন দাম বাড়তেছে। এলাচির দাম বেশি, জিরার দাম বেশি। এগুলোর চাহিদা বেশি এখন। সামনে কোরবানির ঈদ। সবাই এখন, এগুলো নিত্যপণ্য, এগুলো লাগবেই ঈদের সময়।”
দাম বাড়ার পেছনে এলসিকে দায়ী করেছেন বিক্রেতা শফিউদ্দিন। তিনি বলেন, “ যারা এলসি করে, তাদের কাছেই সবকিছু। তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। ডলারের সমস্যা, ডলারের দাম বাড়তেছে। এই কারণে, এলসিতে সমস্যা, এই কারণেই দাম বাড়তেছে সবকিছুর।”
ছোট এলাচির দাম বেড়ে গেছে উল্লেখ করে বিক্রেতা সালামুদ্দিন বলেন, “এলাচির দাম, ছোট এলাচির দাম বাইড়্যে গেছে। যারা ইমপোর্ট করে, হ্যারা তো আজকে ইমপোর্ট করে নাই। ডলারের দাম বাড়ছে আজ দুই-তিনদিন আগে, কিন্তু যারা ইমপোর্ট করে, হ্যারা কয় ডলারের দাম বেশি। উনারা ডলারের দাম হিসাব কইর্যা পুরান মাল বিক্রি করে নতুন দামে।”
মসলার দাম নিয়ে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারাও। ব্যবসায়ীরা ঈদের আগে মসলা মজুদ করে অতিরিক্ত মুনাফা করেন বলে জানান তারা। এমনই একজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়েছে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের এই প্রতিবেদকের। বাজারে আসা এক ব্যাংক কর্মকর্তা সালেহ কর্মকর্তা বলেন, “সামনে কোরবানির ঈদ। এখানে বিশেষ করে মসলাগুলা, জিরা, আদা, রসুন, পেঁয়াজ- এই মসলাগুলার দিকে একটু নজর দেওয়া উচিত।”
সকালে বাজারে আসা আরেক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলেও একই সুর শোনা গেল। দেশের একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, “মসলাগুলার দাম বাড়তেছে। আর এই কোরবানির জন্য এটার প্রেশার বেশি পড়তেছে। এই কোরবানির ঈদের কারণেই আমাদের সব মসলা, সব মসলাগুলা স্টক করতেছে, মনে হইতেছে। যদি সরকার বাজারডা মনিটরিং রাখে, তাহলে এখন আমাদের ঈদ, বা পূজা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, আমরা বাজার মনিটরিং করবো সুন্দরভাবে, তাহলে মনে হয় আমরা এই দ্যাশে বাঁচতে পারবো।”
স্কুল শিক্ষক তাহের বলেন, “যখন দেখবেন যে ঈদ বা কোনো অকেশন থাকে, তখন সবকিছু মসলা বলেন ক্যান, নিত্যপ্রয়োজনীয় যেগুলো জিনিস রয়েছে, সবগুলোর দামই বেড়ে যায়।”
বাজারে এই প্রতিবেদককে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সবুজ বলেন, “প্রত্যেকটা মসলার দামই উচ্চমূল্য, এখন এটা কি আসলে বাজার সিন্ডিকেট না ডলারের প্রবলেম- এই জিনিসটা আসলে আমরা বুঝতে পারছি না। এটা সরকার বুঝতে পারবে।”
চলতি বছর পর্যাপ্ত মসলা আমদানি করা হলেও উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে দাম। বাজার তদারকির মাধ্যমে মসলার দামে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হবে ; এমনটাই প্রত্যাশা সবার।