ডেডলাইন ১৯ জুলাই: কোটা আন্দোলনে সহিংসতায় যা করলেন রিকশাচালকরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৭, ২০২৪, ০৮:১৬ পিএম

ডেডলাইন ১৯ জুলাই: কোটা আন্দোলনে সহিংসতায় যা করলেন রিকশাচালকরা

ছবি: সংগৃহীত

ডেডলাইন ১৯ জুলাই, শুক্রবার। স্পট: মৌচাক এলাকা। জুমার নামাজের আগেভাগেই কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের জমায়েত ঘিরে অবস্থান নিতে থাকে পুলিশ। আগের দিনগুলোর সহিংস ঘটনা এদিন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বাড়িয়ে তোলে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিক্ষার্থীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস (টিয়ার শেল) ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় রাস্তার একপাশে আটকে পড়েন রিকশাচালকরা। ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়েছিলেন তারা।

আটকে পড়া এসব রিকশাচালকের দিকেও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন- ‘আমাদের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’।

মৌচাক এলাকায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে রিকশাচালক শাহিন বলেন, “ভয়ংকর দৃশ্য ছিল এটা। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছিল, আর তারা (বিক্ষোভকারী) পাথর ছুড়ে পাল্টা জবাব দিচ্ছিল। আমি জীবন বাঁচাতে দ্রুত রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে পালিয়ে যাই।”

সহিংসতা-কারফিউ, ভালো নেই রিকশাচালকরা

কোটা আন্দোলনে সহিংসতা ও তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কারফিউ ঘোষণার কারণে রিকশাচালকদের জীবনে দুর্দিন নেমে এসেছে। দারিদ্রাবস্থার কথা তুলে ধরে কুমিল্লার বাসিন্দা রিকশাচালক শাহিন বলেন, “সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও তারও পরে সরকারের কারফিউয়ের কারণে রিকশাচালকদের আয়ে ধস নেমেছে। ১৯ জুলাই রাজধানীর পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠার দিন আমার উপার্জন ছিল মাত্র ১৫০ টাকা।”

নিজেদের অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্যের অবস্থা উল্লেখ করে আরেক রিকশাচালক শাহাবুদ্দিন প্রশ্ন তুলেছেন, “আমরা যদি পেটের খিদেতেই মরে যাই, তাহলে ভয় করে লাভ কী?”

রাজধানীতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় গত ২২ জুলাই শাহাবুদ্দিনের উপার্জন ছিল মাত্র ৭০ টাকা। সেদিনের দুর্বিষহ স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা এক পাশ থেকে গুলি চালাচ্ছিল আর অন্য পাশ থেকে আন্দোলনকারীরা ইট ছুড়েছিল। আমি দুই পক্ষের মাঝখানে পড়ে যাই। আমি আমার রিকশা ছেড়ে পালাতে পারিনি। কারণ মালিককে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হতো। এমন সময় কয়েকজন রিকশাচালক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে নিরাপদে নিয়ে যান।”

বাবার মৃত্যুর পর থেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এই রিকশাচালক বলেন, “আমরা সহিংসতার মধ্যেও সাহসী ছিলাম, কারণ আমরা ক্ষুধার্ত। এ ছাড়া ক্ষুধার জ্বালায় মায়ের চোখে জল দেখতে হলে, বেঁচে থেকে লাভ কী?”

রিকশাচালকদের আর্থিক দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে শাহিন বলেন, “এই অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এটা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবন অচল হয়ে পড়েছে। আমরা শান্তি চাই।”

সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন রিকশাচালকরা

এদিকে ১৯ জুলাই রাজধানীর বনশ্রী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় রিকশাচালকরা সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ও আহতদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। বিশেষ করে বনশ্রী এলাকায় রিকশাচালক স্বপন সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে নিজের রিকশায় নেওয়ার বিষয়ে বলেন, “আমি তাকে গোঁড়ান ট্যাম্পুস্ট্যান্ড পর্যন্ত নিয়ে যাই। তখন তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমি তার সঙ্গীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য একটি অটোরিকশা খোঁজার পরামর্শ দিই। আমার পায়ে টানা রিকশা হওয়ায় গতি খুব কম ছিল। তবে আমি তাদের থেকে কোনও ভাড়া নিইনি।”

সংঘর্ষকালীন আহত শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের নিয়ে অন্তত পাঁচবার আশপাশের হাসপাতালে যাওয়া মোহাম্মদপুরের রিকশাচালক কাশেম আল জাজিরাকে বলেন, “মানুষের হাতে লাঠি ছিল, তারা ইট ছুড়ছিল, কিন্তু পুলিশ গুলি ছুড়েছিল। যার ফলে অসংখ্য মানুষ আহত হন। আমি দায়িত্ব নিয়ে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাই।”

Link copied!