আগস্ট ২৯, ২০২৪, ০৮:০০ এএম
সাবেক সেনাপ্রধানরা সাহস দেখালে শেখ হাসিনা বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকতেন না বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) শেখ মামুন খালেদ।
গতকাল বুধবার (২৮ আগস্ট) বণিক বার্তা অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালককে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে অনেককেই তার যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে। অনেকের কোর্ট মার্শাল হয়েছে। এতে সেনাবাহিনী কী ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে?”
জবাবে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের প্রশংসা করে ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক বলেন, “সেনাবাহিনীতে পিএসসি না করলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হতে পারবে না বলে আমাদের এখানে সিস্টেমই আছে। কিন্তু কাউকে কাউকে মেজর জেনারেল পর্যন্ত করা হয়েছে। সেনা প্রধান এগুলো প্রমোট করেছেন। আর্মিতে কিন্তু এগুলো খুবই স্বচ্ছ ছিল একটা সময় পর্যন্ত। এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে বঙ্গভবনে নিয়ে গেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির সামনে অ্যাটর্নি জেনারেল জোর করছেন। কিন্তু তিনি তো ছাড়েননি। তিনি বলেছেন, না, আমি এটা করতে পারবো না। এ রকম সাহসিকতা দেখিয়েছেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।”
সাক্ষাৎকারে আজিজ আহমেদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর সিস্টেমটা রক্ষার দায়িত্ব সেনাপ্রধানের। সেনাপ্রধান ভালো হলে সংগঠনটি ভালো করে। তিনি যদি সেটা না করেন তবে তিনি তো তার সংগঠনের ক্ষতি করলেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত আমি বোর্ডে ছিলাম। সেনাবাহিনীতে সবসময়ই বোর্ডে প্রোমোশন হয়। কিন্তু জেনারেল আজিজের সময় দেখলাম বোর্ডের বাইরেও কিছু প্রোমোশন হচ্ছে। তখন আমি শুনলাম তারা একটি নোট বানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে প্রোমোশন দিচ্ছে। সেটাকেই বলা হতো নোটশিট প্রমোশন। ২০১৬-১৭ সালের আগ পর্যন্ত এই ধরনের কোনও প্রোমোশন হয়নি। যেটা জেনারেল আজিজ শুরু করেছেন।”
শেখ মামুন খালেদ বলেন, “শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে বঙ্গভবনে নিয়ে গেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির সামনে অ্যাটর্নি জেনারেল জোর করছেন। কিন্তু তিনি তো ছাড়েননি। তিনি বলেছেন, না, আমি এটা করতে পারবো না। এ রকম সাহসিকতা দেখিয়েছেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি তো জেনারেল মুস্তাফিজের জামাই। শেখ হাসিনার আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু তিনি তার সততা দেখিয়েছেন। বাহিনীর আগের প্রধানরা কেন দেখাননি? কেন তারা অযোগ্য লোককে প্রোমোশন দিলেন? যারা প্রোমোশন পেয়েছে শুধু তাদের দোষ দিলেই হবে না। যারা দিয়েছেন তাদেরও দোষ দিতে হবে। মিডিওকার (মাঝারি মানের) যখন শাসন করা শুরু করে তখন তারা মিডিওকারকে প্রমোট করা শুরু করে।”
সাক্ষাৎকারে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাহসের পর পরই তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “তার জায়গায় আপনি থাকলে কি শেখ হাসিনাকে ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন?”
এই প্রশ্নের জবাবে শেখ মামুন খালেদ বলেন, “এটা ভেতরের ব্যাপার তো। ঠিক বলতে পারবো না যে কোন পরিস্থিতিতে, কী কারণে ভারতে পাঠালেন? তিনি হয়তো তখন শর্ত দিয়েছেন যে আমি পদত্যাগ করতে পারি তবে আমাকে ভারতে পাঠাতে হবে। তিনি (শেখ হাসিনা) হয়তো এই শর্ত দিয়েছিলেন। তখন তো দেশ বাঁচাতে হবে। সেই সময় আরও গোলাগুলি হতে পারত। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও পরিস্থিতি এড়াতে তাকে বিদেশে পাঠানো আমি সঠিক মনে করি। কারণ সবার আগে দেশ।”