শেখ হাসিনার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে চাপে টিউলিপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আগস্ট ৯, ২০২৪, ০৩:০৮ পিএম

শেখ হাসিনার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে চাপে টিউলিপ

টিউলিপ সিদ্দিক

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় চাপে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের নবগঠিত সরকারের সিটি মিনিস্টার বা নগর বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক।

এর আগে লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট থেকে অর্জিত ভাড়া আয় হিসেবে নথিভুক্ত না করার তদন্ত চলছিল টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় সেই চাপ আরও বেড়েছে।

টানা ১৫ বছর দেশ শাসনের পর চলতি বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্পর্কে টিউলিপ সিদ্দিকের খালা হন তিনি। গত ৫ আগস্ট বঙ্গভবনে পদত্যাগপত্রে সই করার পর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন শেখ হাসিনা।

সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের প্রতিবাদে আন্দোলনে সহিংসতায় ৪ শতাধিক লোক নিহত হন। এর জেরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন। ভারত যাওয়ার পর যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার আশ্রয় চাওয়ার গুঞ্জন রটেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলো হত্যা ও গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। যদিও ২০১৫ সালে শেখ হাসিনার সরকারের এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনও তথ্য টিউলিপের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও লন্ডনের সিটি মিনিস্টার হিসেবে লেবার পার্টির নতুন সরকারে তার ভূমিকা নিয়ে আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। এরপর আবার শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য হওয়ায় বর্তমানে তার ওপর কয়েকগুণ চাপ বেড়েছে।

তবে লেবার পার্টির তদন্তের বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিক কোনও মুখ খোলেননি। এমনকি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বা তার খালা শেখ হাসিনার পরিস্থিতি নিয়েও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি।

ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এনমেটেনা অ্যাডভাইজারির প্রতিষ্ঠাতা ও এর একজন ফেলো ম্যাক্স হেস বলেন, “টিউলিপ বেশ কয়েক বছর ধরে লেবার পার্টির এমপি। বাংলাদেশি গণমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সত্যি সত্যি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য আশ্রয় নিলে বিষয়টি খুব অস্বস্তিকর হবে। লেবার পার্টির একটি ভালো ভেটিং প্রোগ্রাম (তদন্ত প্রক্রিয়া) থাকার কথা ছিল। তাই কীভাবে এতদিন কেউ ভাবেনি যে, ভবিষ্যতে এটি নিয়ে কোনও সমস্যা হতে পারে?”

২০১৯ সালে চ্যানেল ফোরের এক অনুসন্ধানে উঠে আসে, টিউলিপের পুনর্নির্বাচনকে সমর্থনের জন্য আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখা একটি প্রচারণা চালাচ্ছে।

অনুসন্ধানকারীরা দুইবার যুক্তরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হতে টিউলিপকে সাহায্যের জন্য তার আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভিডিও প্রমাণ পেয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তোলা তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবিতেও টিউলিপ সিদ্দিককে দেখা গেছে।

পলিটিকো যুক্তরাজ্যের শ্রম সদর দপ্তরকে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সাবেক বাংলাদেশি সরকারের সম্পর্ক এবং তার মন্ত্রিত্বের বিষয়ে ওঠা জল্পনা সম্পর্কে তার অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এমনকি বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত দলের সঙ্গে তার যোগসূত্র সহকর্মী লেবার এমপিদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেক এমপি রূপা হক সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারকে ‘স্বৈরাচারী সরকার’ বলে অভিহিত করেছেন।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

Link copied!