২২ সালের পর নেই কোনো কর্মসূচি

সুযোগ সন্ধানী জাতীয় পার্টি

গোলাম রাব্বানী

অক্টোবর ২৬, ২০২৩, ১০:১৯ পিএম

সুযোগ সন্ধানী জাতীয় পার্টি

যার দিকে দেশি-বিদেশি মতামতের পাল্লা ভারী থাকবে, তাদের সমর্থন করবে জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

কাগজে কলমে বিরোধী দল হলেও সমঝোতা ও সুযোগ সন্ধানী কৌশল অবলম্বন করছে জাতীয় পার্টি। বেশ কয়েকবার ৩০০ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও দলের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ ক্ষমতাসীনদের সাথে সমঝোতা করেই নির্বাচন করার পক্ষে সায় দিয়েছে। দলের কো–চেয়ারম্যানদের সাথে বৃহস্পতিবার বৈঠকে এই মতামত আসে। তবে সমঝোতা হলেও জাতীয় পার্টির গুরুত্ব বাড়াতে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়।

একাধিক কো-চেয়ারম্যান দ্য রিপোর্টকে জানান, বিএনপি নির্বাচন না করলে সমঝোতায় নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি। আর যদি বিএনপি আন্দোলন সফল করে নির্বাচনে অংশ নেয় তা হলে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। তখন যার দিকে দেশি-বিদেশি মতামতের পাল্লা ভারী থাকবে, তাদের সমর্থন করবে জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি। তবে মুখে বললেও  এবার একক নির্বাচনের ঝুঁকি নেবে না তারা। অর্থাৎ অনেকটাই সুযোগ সন্ধানী ভূমিকা নিচ্ছে জাতীয় পার্টি।

অন্য দলের অবস্থান বুঝে ব্যবস্থা

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০২২ সালের ৬ আগস্ট তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জাতীয় পার্টি। তবে এরপর উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি দলটির পক্ষ থেকে। যদিও বিভিন্ন কাউন্সিল ও কমিটির কর্মসূচি ছিল কিন্তু সার্বজনীন কর্মসূচি না থাকায় জাতীয় পার্টির সাথে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা কমে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন কো-চেয়ারম্যানরা।

কো-চেয়ারম্যানের একজন বলেন, কোন অবস্থাতেই বিএনপির সাথে জোট করার যেন পরিকল্পনা না করা হয়। বিএনপি নির্বাচন করার পরিকল্পনায় নেই তবে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে। ফলে তাদের সাথে জোট করার কোন মানে হয় না।

এ বিষয়ে জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, যাই বলি না কেন নির্বাচনের আগে জোট তো আমাদের গঠন করতেই হবে। পার্টি বরাবরই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সঙ্গে থাকতে চায়।

আরেক কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বৈঠকে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগে আমরা কোথায় কবে সভা-সমাবেশ করব, এসব ঠিক করা হচ্ছে। আমরা এখনও এককভাবে ভোট করার পরিকল্পনায় আছি। নভেম্বর মাসে সব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।

ত্রিমুখী নেতৃত্বে আসছে লাগাম

চলতি বছরের ২২ আগস্ট রওশন এরশাদ নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা এক বিবৃতি ছড়িয়ে পরে। সেখানে স্বাক্ষর ছিল বেশ কয়েকজন কো-চেয়ারম্যানের। যদিও সে সময় ভিডিও বার্তা দিয়ে তারা এটাকে ভুয়া বলে দাবি করেন। কিন্তু তখন জাতীয় পার্টির বহিস্কৃত নেতা মশিউর রহমান রাঙা বলেছিল রওশন এরশাদই পার্টির চেয়ারম্যান।

দলের কয়েকজন নেতা বলেন ২০২১ সালে রওশন এরশাদ দেশে ফেরার পর কো-চেয়ারম্যান এমন একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে। সেটাই প্রথম পাতা বিকৃতি করে এই কাজ করা হয়েছে।

অন্যদিকে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত- ‘তিনি সবসময় থাকবেন সরকারের সঙ্গে।’ এমনকি রওশন এরশাদ জোটগতভাবে আওয়ামী লীগের কাছে ১১০ আসন চেয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। গত মাসে ওই তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বিদিশা এরশাদও ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেয়ার জন্য তালিকা প্রস্তুত করছিলেন। যার ফলে ৫ অক্টোবর রাজনৈতিক সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের কে ক্ষমতা দিয়েছে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায়।

নতুন পন্থার খোঁজে নেতৃবৃন্দ

এই মুহূর্তে জাতীয় পার্টির অতি বিপ্লবী হওয়ার চেয়ে কোন পন্থায় বেশি আসন আদায় করা সম্ভব সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। ক্ষমতাসীনদের সাথে থাকলে বেশি আসন পাওয়া সম্ভব। বৈঠকে বিএনপির আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি সরকারের সমালোচনার একপর্যায়ে বর্তমান সংসদ থেকেও পদত্যাগের কথা উঠে আসে দলের ভেতর। কিন্তু বেশিরভাগ জাপা এমপি এতে দ্বিমত পোষণ করায় পিছু হটেন জিএম কাদের।

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সরকারের সাথে থাকতে দলের প্রায় সব এমপি ও অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতার চাপ রয়েছে। কারণ তাদের সাথে আসন ভাগাভাগি থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে সবকিছুতে অনেক দিনের ভালো বোঝাপড়া রয়েছে। সব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিএনপির আন্দোলন সফল হলে এক সিদ্ধান্ত, আর ব্যর্থ হলে আরেক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে মূল কথা, জাতীয় পার্টির ভবিষ্যতের জন্য আসন বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।

গত ১৯ আগস্ট রওশন এরশাদ গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এরশাদ ও জাতীয় পার্টি ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে ছিল। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে এরশাদকে ঘিরে অনেক নাটকীয়তা হয়েছিল। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও জাতীয় পার্টিকে সেই নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছিল। তবে ওই নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির তিনজন নেতা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। একই সঙ্গে সংসদে বিরোধী দলের আসনেও বসেছিল জাপা।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে পারেনি জাতীয় পার্টি। সরকারের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি ২২টি আসন পেয়েছে। এই সংসদেও দলটি বিরোধী দলের আসনে বসেছে।

Link copied!